ঢাকাবুধবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  1. কৃষি ও পরিবেশ
  2. খেলা
  3. জাতীয়
  4. ধর্ম
  5. বিনোদন
  6. বিশ্ব
  7. ভ্রমণ
  8. মতামত
  9. রাজনীতি
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সাক্ষাৎকার
  12. সারাদেশ
  13. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ খবর

পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথ: কী করতে হবে এখনই?

সংবাদ লাইভ
নভেম্বর ১৯, ২০২৫ ৩:০৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়লেও সংরক্ষণ সংকট, পোস্ট-হারভেস্ট ক্ষতি ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে দামের অস্থিরতা বারবার দেখা দেয়। আমদানিনির্ভরতা ও সাপ্লাই চেইনের বাধাও স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এসব চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সমাধান নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এর কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুস সালাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কৃষিবিদ আবুল বাশার মিরাজ

প্রশ্ন: বাংলাদেশে পেঁয়াজকে এত গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে কেন বিবেচনা করা হয়?

ড. মো. আব্দুস সালাম: পেঁয়াজ শুধু একটি সবজি নয়, এটি আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির দৈনন্দিন অপরিহার্য উপাদান। প্রতিটি ঘরের রান্নায় এটি ব্যবহৃত হয়, তাই কোনো সংকট বা দামের ওঠানামা সরাসরি মানুষকে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি পুষ্টিগুণ, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও এটি বাংলাদেশে লাখো কৃষকের জীবিকার উৎস। সুতরাং পেঁয়াজ খাদ্য, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির তিন ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: দেশে বারবার পেঁয়াজের দামের অস্থিরতা কেন দেখা যায়?

ড. মো. আব্দুস সালাম: মূলত সরবরাহ শৃঙ্খলার দুর্বলতা, পর্যাপ্ত সংরক্ষণ না থাকা এবং ৩০% পর্যন্ত পোস্ট-হারভেস্ট ক্ষতির কারণেই বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়। মৌসুমে দাম পড়ে যায়, কারণ কৃষকরা দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করতে পারেন না। আবার অফ-সিজনে উৎপাদন কম থাকায় এবং আমদানিতে বিলম্ব হলে দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। পাশাপাশি কিছু মধ্যস্বত্বভোগীর মজুতদারি ও জল্পনা বাজারকে আরো অস্থিতিশীল করে তোলে।

প্রশ্ন: দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা উৎপাদন কত?

ড. মো. আব্দুস সালাম: বর্তমানে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩.২–৩.৫ মিলিয়ন টন। উৎপাদন ৪ মিলিয়ন টনের মতো হলেও বাস্তবে বাজারে এই উৎপাদনের পুরোটাই পৌঁছায় না, কারণ ফসল কাটার পর সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে প্রায় ৩০% নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দেশকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

প্রশ্ন: দেশ উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও কেন আমদানির ওপর নির্ভরশীল?

ড. মো. আব্দুস সালাম: কারণ আমাদের উৎপাদন ভিত্তি উন্নত হলেও সাপ্লাই চেইন দুর্বল। সংরক্ষণাগার ও আধুনিক গুদাম না থাকা, সঠিক পরিবহন ব্যবস্থা না থাকা এবং অফ-সিজনে উৎপাদন কম হওয়া, এই তিনটি কারণেই আমাদের আমদানি করতে হয়। এছাড়া প্রতিবেশী দেশের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বা আমদানি বিলম্ব বাজারে সংকট আরও বাড়িয়ে দেয়।

প্রশ্ন: কোন কোন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়?

ড. মো. আব্দুস সালাম: মূল উৎস হচ্ছে ভারত, কারণ নিকটবর্তী হওয়ায় পরিবহন ব্যয় কম। এছাড়া ঘাটতির সময় থাইল্যান্ড ও চীন থেকেও পেঁয়াজ আসে। তবে বিদেশনির্ভরতা আমাদের দেশের বাজারকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

প্রশ্ন: দেশে পেঁয়াজ চাষ কোন কোন জেলায় বেশি?

ড. মো. আব্দুস সালাম: পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, অভয়নগর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পেঁয়াজ উৎপাদনের মূল কেন্দ্র। এসব এলাকায় মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী, এবং কৃষকরাও দীর্ঘদিন ধরে অভিজ্ঞ।

প্রশ্ন: বর্তমান জমির ব্যবহার উৎপাদন সম্ভাবনা কেমন?

ড. মো. আব্দুস সালাম: বর্তমানে ১.০৮ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হলেও এর উৎপাদন দ্বিগুণ করার সুযোগ আছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ এবং অনাবাদি শুষ্ক জমিকে কাজে লাগানো গেলে উৎপাদন আরও বাড়বে। সঠিক জাত নির্বাচন, সেচ ব্যবস্থাপনা এবং হাইব্রিড জাতের ব্যবহার বাড়ালে উৎপাদন সম্ভাবনা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

প্রশ্ন: পেঁয়াজের উচ্চ উৎপাদনের জন্য কোন জাতগুলো গুরুত্বপূর্ণ?

ড. মো. আব্দুস সালাম: বর্তমানে বারি পেয়াঁজ-৫ জাতটি দেশের জন্য খুব সম্ভাবনাময়, কারণ এটি ১৮–২২ টন/হেক্টর উৎপাদন দেয়। পাশাপাশি নতুন হাইব্রিড জাতগুলো ৩০–৩৮ টন পর্যন্ত উৎপাদন দিতে পারে। তবে এসব জাতের জন্য আধুনিক চাষাবাদ, সঠিক সার ব্যবস্থাপনা ও সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রশ্ন: দেশে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ড. মো. আব্দুস সালাম: আমরা এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বীজ আমদানি করি। ফলে দাম বেশি হয় এবং কখনও সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। যদি স্থানীয়ভাবে উচ্চমানের বীজ উৎপাদন বাড়ানো যায়, তবে চাষ খরচ কমবে, উৎপাদন বাড়বে, এবং বাজার স্থিতিশীল হবে। স্থানীয় বীজ কৃষকদের জলবায়ু-উপযোগী জাত চাষেও উৎসাহিত করবে।

প্রশ্ন: স্থানীয় বীজ উৎপাদন বাড়াতে কী ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন?

ড. মো. আব্দুস সালাম: বীজ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক বীজ প্রক্রিয়াকরণ ল্যাব, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে উৎসাহিত করতে হবে।

প্রশ্ন: পোস্টহারভেস্ট ক্ষতি কমাতে কী করা উচিত?

ড. মো. আব্দুস সালাম: আদর্শ সংরক্ষণাগার, ঠাণ্ডা গুদাম, ভেন্টিলেটেড ওয়্যারহাউস, এবং উন্নত সংগ্রহ-পদ্ধতি অত্যন্ত জরুরি। পেঁয়াজ খুব সেনসিটিভ, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা ও বাতাস চলাচল সঠিক না হলে দ্রুত নষ্ট হয়। তাই কৃষকদের সঠিক পরবর্তী-ফসল ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।

প্রশ্ন: গ্রীষ্মকালীন বা অফসিজন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন?

ড. মো. আব্দুস সালাম: সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বারিন্দ ট্র্যাক্ট, উত্তরাঞ্চলের উঁচু জমি, এবং অনাবাদি খরা-প্রবণ এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ দ্রুত বাড়ানো যায়। এটি করলে সারা বছরের সরবরাহ ধরে রাখা সম্ভব হবে এবং অফ-সিজনে আমদানি নির্ভরতা কমবে।

প্রশ্ন: পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাত শিল্প কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ড. মো. আব্দুস সালাম: আমরা পেঁয়াজের যে অংশ নষ্ট করি, তার বড় অংশই প্রক্রিয়াজাত শিল্প থাকলে বাঁচানো যেত। পেঁয়াজ পাউডার, ডিহাইড্রেটেড অনিয়ন, পেস্ট ইত্যাদি উৎপাদন করলে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে খাদ্য শিল্পে এর ব্যাপক ব্যবহার ও রপ্তানি সুযোগ তৈরি হবে।

প্রশ্ন: বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে কী করা উচিত?

ড. মো. আব্দুস সালাম: বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ব্যবহার, ডিজিটাল ট্রেসেবিলিটি ব্যবস্থা, কৃষক সমবায় গঠন, এবং সরকারি বাজার মনিটরিং জোরদার করলে অস্বচ্ছতা কমবে। বাজারে ফসল আসার গতি বাড়াতে পরিবহন ও লজিস্টিকস ব্যবস্থাও উন্নত করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ কীভাবে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে?

ড. মো. আব্দুস সালাম: পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে তিনটি মূল বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, উচ্চমানের বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, যাতে কৃষকরা নির্ভরযোগ্য ও উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহার করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে যে ৩০% পোস্ট-হারভেস্ট ক্ষতি হচ্ছে, তা প্রযুক্তি, উন্নত সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে ১০%-এ নামিয়ে আনা জরুরি। তৃতীয়ত, সারা বছর উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণ করা হলে অফ-সিজনের ঘাটতি দূর হবে। তিনি বলেন, এই তিনটির সঙ্গে যদি গবেষণা জোরদার করা, কৃষকের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, বাজার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা এবং আধুনিক সংরক্ষণাগার স্থাপন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ খুব সহজেই পেঁয়াজ উৎপাদনে স্থিতিশীলতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবে।

সংবাদ লাইভ/সাক্ষাৎকার

www.sangbadlive24.com এ প্রকাশিত সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও সবকিছুই আমাদের নিজস্ব। বিনা অনুমতিতে এই নিউজ পোর্টালের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। যে কোন বিষয়ে নিউজ/ফিচার/ছবি/ভিডিও পাঠান news.sangbadlive24@gmail.com এই ইমেইলে।