গাজা সিটি দখলের লক্ষ্য সামনে রেখে ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) টানা ২৪ ঘণ্টার হামলায় ধসে গেছে অসংখ্য ভবন, প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৫ জন। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের হিসাবে, এ নিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস হওয়া ভবনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০।
সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছে গাজার আল-রুয়া টাওয়ারে। বহুতল এই ভবনটিতে ছিল ২৪টি ফ্ল্যাট, দোকান, একটি ক্লিনিক ও জিম যা মুহূর্তেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, ভবন খালি করার সতর্কবার্তা দেওয়ার পরই তারা হামলা চালিয়েছে। তবে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো জানাচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে পালালেও কোথাও নিরাপদ আশ্রয় মিলছে না। ওইদিন কেবল উত্তর গাজাতেই নিহত হন ৪৯ জন।
ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়াহ আল-জাজিরাকে বলেন, “আজ শত শত পরিবার তাদের আশ্রয় হারিয়েছে। ইসরায়েল এসব বিস্ফোরণ ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে সরিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা জানি, দক্ষিণ কিংবা কোনো মানবিক অঞ্চলে কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, তাদের বাহিনী কেবল “সন্ত্রাসী অবকাঠামো ও বহুতল” ধ্বংস করছে। তবে ফিলিস্তিনি পক্ষের অভিযোগ, প্রকৃত লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে সাধারণ মানুষের আবাসন ও বেসামরিক স্থাপনা। এর আগেই সৌসি ও মুশতাহা টাওয়ার একই কায়দায় ধ্বংস করা হয়েছে।
আল-জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, গাজা সিটিতে “প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিট পরপর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।” সাবরা, জাইতুন ও শেখ রাদওয়ানসহ বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক ভবন, সরকারি স্থাপনা, স্কুল ও মসজিদে হামলা হয়েছে। এমনকি দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করে গোটা রাস্তা উড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
গাজার পশ্চিমে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত আল-ফারাবি স্কুলে ইসরায়েলি রকেট হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত আটজন, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মেদ আয়েদ বলেন, “আমরা দুটি হাত উদ্ধার করেছি, এগুলো শিশুদের হাত।” আহত সোহাইব ফোদা জানান, ধ্বংসস্তূপে তার চাচাতো বোনের ওপর ব্লক পড়ে আঘাত করেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৪ হাজার ৩৬৮ জন, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৬ জন। দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছেন অন্তত ৩৮৭ জন, এর মধ্যে ১৩৮ শিশু। উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত মৃত্যু ১০৯, যাদের মধ্যে ২৩ জন শিশু।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডকে সরাসরি ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার নতুন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের ইঙ্গিত দেন। তিনি একে হামাসের জন্য “চূড়ান্ত সতর্কতা” বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা মার্কিন পক্ষ থেকে একটি “ধারণা” পেয়েছে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির যে কোনো প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছে।