ক্যানসার চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ইমিউনোথেরাপি ও মলিকুলার টার্গেটেড থেরাপি। প্রচলিত কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি যেখানে সুস্থ কোষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেখানে নতুন এই চিকিৎসাগুলো তুলনামূলকভাবে নির্দিষ্ট, কার্যকর এবং অনেক ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
ইমিউনোথেরাপি : দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কাজে লাগানো
ইমিউনোথেরাপি এমন এক পদ্ধতি যেখানে রোগীর নিজের ইমিউন সিস্টেমকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপযোগী করে তোলা হয়। ক্যানসার কোষ সাধারণত শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা এড়িয়ে যায়। চেকপয়েন্ট ইনহিবিটরস, CAR-T সেল থেরাপি, ক্যানসার ভ্যাকসিন এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের ক্যানসারে ব্যবহৃত হচ্ছে।
* মলিকুলার টার্গেটেড থেরাপি : জিনের ভেতর নির্দিষ্ট আঘাত
টার্গেটেড থেরাপি সরাসরি ক্যানসার কোষের ভেতরকার জিন বা প্রোটিনকে আঘাত করে। ফলে সুস্থ কোষের ক্ষতি কম হয়। উদাহরণস্বরূপ-টাইরোসিন কাইনেজ ইনহিবিটর (ইমাটিনিব, ডাসাটিনিব) লিউকেমিয়া চিকিৎসায় বিপ্লব এনেছে। তেমনি EGFR ইনহিবিটর, ALK ইনহিবিটর, BRAF ইনহিবিটর প্রভৃতি ওষুধ বর্তমানে বিভিন্ন ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
* বাংলাদেশে পরিস্থিতি
দেশের ইতোমধ্যেই টার্গেটেড থেরাপি ব্যবহার শুরু হয়েছে। নির্বাচিত রোগীদের ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপিও প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে এর উচ্চমূল্যই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থেকে গেছে আধুনিক এ চিকিৎসা।
* চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
ইমিউনোথেরাপিতে মাঝে মাঝে অটোইমিউন জটিলতা দেখা দিতে পারে। টার্গেটেড থেরাপিতে দীর্ঘমেয়াদে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। তবে গবেষণা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে ভবিষ্যতে ইমিউনোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপির সমন্বয়ে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর ক্যানসার চিকিৎসা তৈরি হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হেমাটোলজি বিভাগ ও বিএমটি ইউনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ