যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি, বরং এটি মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।
পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা ‘ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ)’-র প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ এই হামলায় ধ্বংস হয়নি। হামলার মূল ক্ষয়ক্ষতি স্থলভাগের অবকাঠামোতে সীমাবদ্ধ। ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো অনেকটাই অক্ষত রয়ে গেছে।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। প্রতিটি স্থাপনায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয়, যা ৬০ ফুট কংক্রিট বা ২০০ ফুট মাটির গভীরে বিস্ফোরিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে “অত্যন্ত সফল অভিযান” বলে মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” করা হয়েছে।
তবে হামলার তিন দিনের মাথায় ডিআইএ’র মূল্যায়ন বলছে, ইরানের সেন্ট্রিফিউজগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে এবং দুটি পারমাণবিক স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেলেও মূল ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোর ক্ষতি হয়নি।
এছাড়া, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফোর্দোর পারমাণবিক স্থাপনার আশপাশে ছয়টি নতুন গর্ত এবং ধ্বংসস্তূপ থাকলেও, ভেতরের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনো নিশ্চিত নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র সিবিএস নিউজকে জানায়, “এই হামলায় ইরানকে সর্বোচ্চ কয়েক মাস পেছনে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ইরান তার কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে কত সময় নেয়, তা নির্ভর করবে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত ও খননের গতির উপর।”
গোয়েন্দারা আরও নিশ্চিত করেছেন, হামলার আগেই ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
তবে হোয়াইট হাউস এই গোয়েন্দা মূল্যায়নকে “সম্পূর্ণ ভুল” বলে আখ্যা দিয়ে দাবি করেছে, এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করার উদ্দেশ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন হামলার পর সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন, “সবগুলো স্থাপনাতেই চরম ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংস হয়েছে।”
এর জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে বলেন, “সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমস মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এক সামরিক অভিযানকে হেয় করছে।”