ঢাকাসোমবার , ৬ অক্টোবর ২০২৫
  1. কৃষি ও পরিবেশ
  2. খেলা
  3. জাতীয়
  4. ধর্ম
  5. বিনোদন
  6. বিশ্ব
  7. ভ্রমণ
  8. মতামত
  9. রাজনীতি
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সাক্ষাৎকার
  12. সারাদেশ
  13. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ খবর

আমাকে গড়েছে আমার স্কুল শিক্ষকেরা

মতামত বিভাগ
অক্টোবর ৬, ২০২৫ ৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আবুল বাশার মিরাজ: প্রতি বছর ৫ অক্টোবর যখন বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়, তখন আমার হৃদয়ে এক ধরনের অন্যরকম আবেগ খেলে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আমিও চেষ্টা করি আমার জীবনের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের স্মরণ করতে। অনেক সময়ই মনে হয়েছে লিখতে বসলে কাকে নিয়ে লিখবো? একজন শিক্ষকের কথা লিখলে অন্য শিক্ষক হয়তো খারাপ মনে করতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করেছি, আমি একজনকে নয়, আমার সব শিক্ষকদের কথাই লিখবো, কারণ তাঁদের সম্মিলিত অবদানেই আমি আজকের আমি।

আমার শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয়েছিল বগুড়া জেলার দুঁপচাচিয়া উপজেলার একটি গ্রামীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বোরাই সরকারি প্রাইমারি স্কুলে’। নামের মতোই সত্যি বড়াই করার মতো একটি স্কুল। মাটির দেয়াল আর টিনের চালার সেই স্কুল এখনো আমার চোখে ভাসে। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের একমাত্র বিদ্যাপীঠ ছিল এটি। মামার বাড়িতে বড় হওয়ায় আমার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়েছিল সেখানেই। আমার মামাতো ভাই-বোন সবাই সেই স্কুলে পড়তো। প্রায় তিন বছর সেখানে পড়েছিলাম। ছোট্ট জীবনের সেই দিনগুলো ছিল ভীষণ আনন্দের। শিক্ষকরা ছিলেন অমায়িক, মাটির মতোই কোমল। কী অদম্য পরিশ্রম আর নিয়মিত শৃঙ্খলা আমাদের শিখিয়েছিলেন স্যার! আবার এক হিন্দু শিক্ষক ছিলেন, যিনি আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। কিন্তু পড়া না পারলে শাসনও করতেন। তাঁর কাছে আমরা একইসঙ্গে ভয়ের ও ভালোবাসার পাঠ নিয়েছি।

সেই স্কুলের স্মৃতিতে সবচেয়ে বেশি মনে থাকে পরিবেশ সচেতনতার শিক্ষা। স্কুলের পাশে ছিল একটি বড় পুকুর। বিদ্যালয়ের মাঠের চারিদিকে যখন নতুন করে নারিকেল গাছ লাগানো হলো, তখন শিক্ষকরা আমাদের শিখিয়েছিলেন, প্রকৃতির প্রতি যত্ন নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর আমরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট বালতিতে পানি নিয়ে গাছগুলোতে দিতাম। পুকুর থেকে পানি এনে একে অপরের হাতে বালতি সরিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত গাছে পৌঁছে দেওয়া, এ ছিল আমাদের প্রতিদিনের কাজ। আজ আমি যখন কৃষি, বৃক্ষপ্রেম কিংবা পরিবেশ সচেতনতার কথা বলি, তখন উপলব্ধি করি- আমার শিকড় সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছেই শিখেছিলাম।

তবে দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায় শুরু হয় বগুড়া জিলা স্কুলে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে। সেসময় এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছিল এক বিশাল সাফল্য। কয়েক হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে মেধাতালিকায় আমি যখন ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হলাম, তখন থেকেই মনে হলো, এই স্কুলের শিক্ষকদের সান্নিধ্য পাওয়া মানেই জীবনের সেরা সুযোগ পাওয়া।

একটানা আট বছর, ক্লাস থ্রি থেকে টেন পর্যন্ত বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তাঁরা শুধু বইয়ের পাঠ শেখাননি, শিখিয়েছেন কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়। সততা, শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা, দেশপ্রেম সবকিছুই তাঁদের কাছ থেকে শিখেছি।

এই বিদ্যালয় গড়ে তুলেছে অসংখ্য কৃতি মানুষ। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও শহীদ রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান, ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী গাজিউল হক, বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ, বিজ্ঞানী ও লেখক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, প্রখ্যাত লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং বর্তমান সময়ের আলোচিত অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকি ভট্টাচার্য, সবাই এই বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র। তাঁদের সাফল্য প্রমাণ করে দেয়, কেমন শিক্ষকমণ্ডলী প্রজন্মকে গড়ে তুলেছেন।

আমার নিজের জীবনেও শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম। কঠোর পরিশ্রম করার অভ্যাস, নিয়মিত পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা সবই এসেছে তাঁদের কাছ থেকে। অনেক সময় শাসনের মাধ্যমে, অনেক সময় স্নেহের মাধ্যমে, তাঁরা আমাদের মননে জাগ্রত করেছেন আলো।

শিক্ষকেরা আমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। কখনো কঠোরভাবে শাসন করেছেন, আবার কখনো মমতার আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিয়েছেন। স্কলে ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি সহপাঠ কার্যক্রমে আমাদের অনুপ্রাণিত করা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় যুক্ত করা, এসবই আজ মনে হয় আমাদের চরিত্র গঠনের সোনালি অধ্যায়। তাঁরা শুধু ছাত্র বানাননি, আমাদের করেছেন নেতৃত্বদানকারী মানুষ। আজ আমি যখন পেশাগত জীবনে কৃষিবিদ হিসেবে কাজ করছি, তখনও আমার শিক্ষকদের শেখানো শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও কর্মনিষ্ঠা আমার প্রতিটি পদক্ষেপে পথ দেখায়। তাঁদের অবদান ছাড়া আমি কিছুই নই।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস কেবল একটি দিবস নয়, এটি শিক্ষকদের প্রতি চিরন্তন কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি মানুষের সাফল্যের আড়ালে তাঁর শিক্ষকদের ঘাম-অশ্রু মিশে থাকে। সমাজে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, লেখক, শিল্পী যাই হই না কেন, আমাদের প্রথম পরিচয় “ছাত্র”। আর সেই ছাত্রকে গড়ে তোলেন শিক্ষক।

বগুড়া জিলা স্কুল আমার জীবনের গর্ব। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ছিলেন আলোর প্রদীপ। তাঁরা আমাদের অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন, স্বপ্নপূরণের সাহস জুগিয়েছেন। তাঁদের শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা, আদর্শ আর অনুপ্রেরণা আজও আমার জীবনের পথপ্রদর্শক হয়ে আছে। আমি গর্বিত যে আমি এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের একজন প্রাক্তন ছাত্র। আমার সব শিক্ষকদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁরা শুধু আমাকে শিক্ষিত করেননি, করেছেন প্রকৃত মানুষ। শ্রদ্ধাঞ্জলি সকল শিক্ষককে, যাঁরা আমাদের গড়ে তুলেছেন।

লেখক: কৃষিবিদ ও সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার, বাংলাদেশ।

##

www.sangbadlive24.com এ প্রকাশিত সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও সবকিছুই আমাদের নিজস্ব। বিনা অনুমতিতে এই নিউজ পোর্টালের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। যে কোন বিষয়ে নিউজ/ফিচার/ছবি/ভিডিও পাঠান news.sangbadlive24@gmail.com এই ইমেইলে।