মোঃ তাসনিম বিন হামিদ: সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই বাংলাদেশে একসময় গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ ছিল। কালের পালাবদলে এদেশের কৃষক ও কৃষিকে জমিদার,দস্যু, বণিক, ইংরেজরা শোষণ করে রক্তচোষা জোঁকের মত।কৃষক বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, হাজী দানেশ, ইলা মিত্র,নুরুল দিন, ফজলুল হক কৃষক ও কৃষি মুক্তির যে সংগ্রাম করে তার পূর্ণতা দেন বাঙালি রাখাল রাজা শেখ মুজিব।জাতির পিতা মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ একটি সোনার বাংলা গড়তে কৃষি শিল্পের উন্নয়ন অপরিহার্য।তাইতো স্বাধীনতার ঊষালগ্নে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে তিনি ‘কৃষক বাঁচাও’ ‘দেশ বাঁচাও’ স্লোগানের সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। শুরু হয় কৃষির যান্ত্রিকিকরন, ছোঁয়া লাগে আধুনিকতার। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দৃশ্যত টেকসই কৃষি ক্ষুধামুক্ত ও খাদ্যে স্বয়ংসসম্পূর্ণ করে তুলেছে আজকের বাংলাদেশ।
অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেতের ইঙ্গিত দিচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট (বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি), ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাদি জমির সঙ্কট ও বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি,বাণিজ্যের অস্থিতিশীলতা। বাংলাদেশের প্রায় ১.৫মিলিয়ন হেক্টর আবাদি জমি প্রতিবছর বন্যা কবলিত হয়।শুধুমাত্র গত দশকে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.০৯ডিগ্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। হিমালয়ের বরফ গলনে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৮.৩অংশ নিমজ্জিত হবে। যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ মাত্র ৮০ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর এবং মাথাপিছু আবাদি জমি০.১২ একর।লবণাক্ততায় আক্রান্ত প্রায় ৩০ লক্ষ হেক্টর জমি। তাছাড়া শিল্প কারখানার বর্জ্য, অতিমাত্রায় কীটনাশক, রাসায়নিক দ্রব্য মাটির গুনাগুন নষ্ট করে চলছে। ফলশ্রুতিতে খাদ্যশস্য, পশুপালন, মাছচাষের উৎপাদন অনেকাংশে কমে যাবে। যা বাংলাদেশের খাদ্য সঙ্কট ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতির ধ্বস নামার আসঙ্কা রয়েছে।
অদূর ভবিষ্যতে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে স্মার্ট (সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী) করতে হবে।এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরন ও দক্ষ ব্যবহার।স্মার্ট এগ্রিকালচার এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান হবে কৃষকের নিজস্ব যেকোন পরিমাণ জমিতেই কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎসচাষের সমন্বয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আয় নিশ্চিত করা।যেখানে স্মার্ট এগ্রিকালচার প্রতিটি অঞ্চলের মৃত্তিকা পরীক্ষা করবে। মৃত্তিকার গুনাগুন, আবহাওয়া যাচাই করে নির্বাচিত করা হবে কোন উচ্চ ফলনশীল ফসলের কোন জাত চাষ হবে।স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হবে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমিত মাত্রায় সার, সেচ এবং কীটনাশক।গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারে নিশ্চিত হবে নিয়ন্ত্রিত বায়ুচলন,তাপমাত্রা ও আদ্রতা। মাৎস্য চাষের জন্য পানির গুনগত মান(pH, তাপমাত্রা, পানি সঞ্চালন,আলো ও অম্লজানের উপস্থিতি) নিয়ন্ত্রিত হবে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।যান্ত্রিকীকরন পদ্ধতিতে গবাদিপশু, পাখি, মাছের বংশগতি তথ্য, শারিরীক অবস্থার তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষন হবে যা বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে। উৎপাদিত খাদ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষন করা হবে অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ায় যা খাদ্যের গুনাগুন অটুট রাখবে। সেইসাথে কৃষি, প্রাণী, মৎস্যসম্পদ থেকে প্রাপ্ত উপজাত সঠিক রিসাইকেল প্রক্রিয়া সম্পাদন করার মাধ্যমে অর্গানিক এগ্রিকালচার এর পথ প্রশস্ত হবে।পাশাপাশি স্মার্ট কৃষি অর্থনীতিবিদদের পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্ট পন্থায় নিয়ন্ত্রিত হবে বিপনন ব্যবস্থা।স্মার্ট এগ্রিকালচার বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বল্প খরচ ও শ্রমে সর্বোচ্চ কৃষি, মৎস ও প্রানিজ খাদ্য পণ্য উৎপাদিত হবে যা দেশীয় খাদ্য চাহিদা শতভাগ পরিপূর্ণ করার পাশাপাশি রপ্তানিমূখী করবে। স্মার্ট এগ্রিকালচার বাস্তবায়নের দ্বারা বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১১.৫ শতাংশ(শস্য ও শাক সবজি ৫.৩৭, প্রাণী সম্পদে ১. ৯০,মৎস্য ২.৫১ এবং বনজ ১.৭১ শতাংশ) থেকে ২০ শতাংশতে উন্নীত হবে।
কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষির নির্ভরযোগ্য ঠিকানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার, ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে পরিকল্পনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে তা কাজে লাগিয়ে স্মার্ট কৃষিবিদ কর্তৃক স্মার্ট এগ্রিকালচার বাস্তবায়ন এখন সময়ের অন্যতম দাবী।সকল প্রতিবন্ধকতা ও অশনি সংকেতকে আশার প্রদীপে পরিনত করতে পারে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও স্মার্ট কৃষিবিদদের উচ্চ গবেষনা ।
লেখক: সাবেক সদস্য, গাইবান্ধা জেলা শাখা ছাত্রলীগ;
কর্মী, বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগ


