মাহাবুব রহমান দুর্জয়: ছোট বেলা থেকেই জেনে এসেছি “আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে শিশুরাই যদি আগামীদিনের ভবিষ্যৎ হয় তবে আগামীদিনের ভবিষ্যতের মাথায় বড়বড় বোঝা কেন? প্রতিদিন দেশের আনাচেকানাচে শিশুদের ঝুকিপূর্ণ কাজের দৃশ্য চোখে পরে। যে কারণে প্রশ্ন এসে যায়। আমাদেও দেশে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় রয়েছে, শিশুশ্রম আইন রয়েছে। কিন্তু সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ বা ব্যবহার নেই কোথাও? আইন ও বিচারের এমন অকার্যকর দৃশ্য দেখলে রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি নাগরিকদের শ্রদ্ধা আসবে কি করে? এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কে? এদের দেখভালের দায়িত্ব নিবে কারা?
দেশের হাজার হাজার শিশু নানান জায়গায় বিভিন্ন পেশায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে যাচ্ছে। অনেকেই শতভাগ মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েও কাজ করছে রাত-দিন। এমন দৃশ্য শুধুমাত্র শহর কেন্দ্রিক নয়, বর্তমানে দেশের সর্বত্র কোন না কোন স্থানে অল্প বয়সি ছেলে ও মেয়ে শিশুরা নিয়মিত ঝুকিপূর্ণ কঠোর পরিশ্রম করছে। এতে করে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ জিবনের ঝুঁকিও দিনদিন বেড়েই চলেছে কিন্তু এর প্রতিকার হচ্ছে না কেন? শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে আইন জেনো সংবিধানের পাতায় পরে থাকার জন্যই। এর ব্যবহার তো দেখছি না। সরকার রাষ্ট্রীয় আইন ও আইনের ধারা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছে ঠিকই তবে এর সঠিক প্রয়োগ, বিচার এবং সমাধান আমরা তেমন একটা দেখি না। সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, লিফলেট, পোষ্টার এবং বিভিন্ন সংগঠনের নানান ধরণের সচেতনতামূলক কার্যক্রম থাকলেও সরকারের যথাযথ মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে মারাত্মকভাবে উদাসীন রয়েছে। কিন্তু কেন?
সরকারের নামমাত্র কিছু কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থাকলেও বাস্তবিকতা এবং সার্বিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আমাদের দেশে শিশুশ্রম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও এবং কিছু সামাজিক সংগঠন শিশুদের সুরক্ষা এবং তাদের অধিকার নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে এনজিও গুলোর অর্থবরাদ্দ থাকলেও তা সামান্যই বটে। অন্যদিকে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলো অর্থের অভাবে তাদের পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারছে না। সমাজসেবা অধিদপ্তর কিংবা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যদি স্থানীয় সংগঠনগুলোকে তাদেও প্রকল্প যাচাই বাছাই করে অর্থবরাদ্দ দিতে পারে কিংবা দেয় তবে দেশের শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব হবে।
দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজ দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নিজেরাই এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে। সরকারের উচিৎ এসকল সংগঠকদের বিবেচনা পূর্বক কাজে লাগিয়ে দেশের নানামুখী সমস্যাগুলো সমাধান করা। সরকার যদি এই বিষয়ে আন্তরিক হয় তবে দেশের অনেক লাভ হবে। যেমন বেকার সমস্যা দূর হবে। নির্দিষ্ট যে সমস্যা নিয়ে তারা কাজ করবে সে সমস্যার সমাধান হবে। দেশে মানবিক নেতা সৃষ্টি হবে। সরকারের কাজে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা হবে। দেশের ভিতরে বিদেশী এনজিও সংস্থাগুলোর প্রয়োজন হবে না। দেশের মেধাবী তরুণরাই দেশের সমস্যা সমাধানের কাজে ব্যস্ত থাকবে এবং এতে করে সমাজটা অনেকাংশে মাদকমুক্ত হবে, বেকারত্ব কমবে এবং সুন্দও ও সুশৃঙ্খল সমাজ বিনির্মান করা সহজ হবে। আমরা কর্মঠ নির্ভশীল শক্তিশালী একটা তরুণ সমাজ সৃষ্টি করতে পারবো। এক্ষেত্রে সরকারকে গুরুত্ব সহকাওে উদ্যোগী হতে হবে।
সরকারের অনেক পরিকল্পনা আছে কিন্তু সেসব পরিকল্পনা গুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নে দেশের বিশাল একটা শিক্ষিত তরুণ সমাজ আছে তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। যারা বেকার বসে মাদক গিলছে, অন্যায় কাজে লিপ্ত হচ্ছে, অপরাধ ও অপরাধীর সৃষ্টি করছে। তারা কোন পথ না পেয়ে এসব কাজের দিকে ঝুঁকছে। তাদেরকে ফেরাতে হবে। সরকারি প্রকল্পে তাদেরকে বেসরকারিভাবে কাজে লাগালে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। গবেষনায় দেখা যায়, সামান্য অভাব বা প্রয়োজনেই অভিভাবকগণ তাদের বাচ্চা শিশুদের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে দিচ্ছে।
সরকারের পরিকল্পনায় শিশুদের জন্য নানামুখী প্রকল্প রয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর, শ্রম মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এসব প্রকল্প দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকল্পগুলো সঠিক বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো জরুরী। সুতরাং দেশের শিশুশ্রম বন্ধের ক্ষেত্রে শুধু নয় দেশের সর্বক্ষেত্রে সরকারের যদি কোন প্রকল্প থাকে তবে সেসকল প্রকল্পে দেশের শিক্ষিত তরুণ সংগঠক এবং বেকার সমাজকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা আমাদের মেধাবী জনশক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারবো বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস রাখি।
লেখক: সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, চাইল্ড’স স্মাইল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।


