লিফট ভোগান্তি যেন থামছেই না জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে একাডেমিক ভবন ও দুটি হলে কার্যরত আছে মোট ১৫টি লিফট। প্রায় সময়ই লিফটগুলো চলতি অবস্থায় বন্ধ হয়ে যাওয়া, অনেকদিন যাবত লিফট মেন্টেইনেন্সে থাকা ভোগান্তিতে ফেলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
গত ১২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) লিফটে প্রায় ৩৪ মিনিট আটকে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী তানভীর রানা। তিনি জানান ,
সকাল ৯.১৫ এর দিকে ডিপার্টমেন্টে যাওয়ার জন্য বিবিএ বিল্ডিং এ থাকা ৩টি লিফটের মাঝেটিতে উঠি। কিন্তু লিফটি ৮ তালায় যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। কিছুতেই দরজা খুলছিলো না। ৫/৮ মিনিট যাবত বার বার ওপেন বাটনে ক্লিক করলেও কোন কাজ হচ্ছিলো না। এরপর আমি ইমার্জেন্সি বেল বাটনে ক্লিক করি কিন্তু কোন সারা পাই নি। লিফটে এতো পরিমান গরম,শরীর থেকে অঝরে ঘাম পরছে,নিশ্বাস নিতেও কিছুটা কষ্ট হচ্ছিলো, সবশেষে বাধ্য হয়ে দরজায় সজোরে আঘাত করতে লাগলাম। এক পর্যায়ে আমার বন্ধু নাঈম বিষয়টি লক্ষ্য করে বিভাগীয় প্রধানকে জানালে দীর্ঘ ৩৪ মিনিট পর আমাকে উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবীর টুটুল হলের লিফটে আটকা পড়ার পর ফেসবুক লাইভে এসে লিফটে অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, লিফটে আমরা ৫ জন ২৫ মিনিট যাবত আটকে ছিলাম। ইমার্জেন্সি বাটনে ক্লিক করছি কোন কাজ হচ্ছে না। লিফটে নেটওয়ার্ক পাওয়া না যাওয়ায় কল দিতে পারছিলাম না। সবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো। একটা লিফটে আটকা পরার পর কেনো ২৫ মিনিট লাগবে উদ্ধার করতে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ঐশী জানান, গত সোমবার আমি সহ ১০ জন আটকে ছিলাম লিফটে। আমরা প্রায় আধা ঘন্টার উপড়ে আটকে ছিলাম। অল্প জায়গা দিয়ে টেনে বের করা হয় আমাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মুনতাহা জানায়, আমি ও আমার বিভাগের সিনিয়ররা লিফটে ২০ মিনিটের মতো আটকে ছিলাম। লাইটও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। অনেক ভয় করছিলো, বাতাস প্রবেশ না করায় গরম লাগছিলো অনেক।
একাডেমিক ভবন ছাড়াও দুটি হলেও লিফটের ভোগান্তিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একাধিক লিফট মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। মাঝে মাঝে এক লিফটে চলে পুরো হল।
বঙ্গবন্ধু হলে থাকা শিক্ষার্থী শিশির বলেন, হলের লিফট যে মাঝে মাঝে ৪টা থেকে ৩ টাই বন্ধ থাকে তখন অনেকক্ষণ দাড়ায় থাকা লাগে। যারা দশ নয় তালায় থাকে তাদের ঝামেলাতো আরও বেশি।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক মো: হাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, লিফটের প্রকল্প চলাকালীন সময়ে আমরা দায়িত্বে ছিলাম। এগুলোর সাথে এখন আমরা সংযুক্ত না। এগুলো মেইনটেনেন্সের দায়িত্ব এখন প্রকৌশল দপ্তরের।
প্রকৌশল দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী ( ইন্সট্রুমেন্ট) মিজানুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে লিফট আটকানোর ঘটনা ঘটতে পারে, অনেকদিন পর পর এটা সব জায়গাতেই ঘটে। আগেতো আরও বেশি ঘটতো। আগে সপ্তাহে এক দুটো ঘটনা ঘটতো। তারপর আমরা লিফট প্রোভাইডারদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে এটা ধীরে ধীরে কমবে। তখন থেকে ঘটনাগুলো কম ঘটছে। সম্প্রতি দুই তিনটা ঘটনা ঘটেছে। এটা মাঝে মাঝে ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে তাদের পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
বড় বিল্ডিং হলেও লিফট অপারেটর থাকে একজন। তার কাছে খবর যদি দ্রুত পৌছাতো তাহলে দ্রুত উদ্ধার করা যেতো। এক্ষেত্রে আমরা লিফটে ইন্টারকোম ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করতেছি। বাজেট স্বল্পতার জন্য এটা করতে দেড়ি হচ্ছে। এটা হয়ে গেলে আশা করি কেও আটকা পড়লে দ্রুত উদ্ধার হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৫টি লিফট বসানোর সময় লিফট কেনায় দূর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।


