ফাতেমা আলী, জবি প্রতিনিধি: মানুষ হিসেবে সকলেরই সমান অধিকার লাভের সুযোগ রয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে হলে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ হিসেবে নারীর যে নিজস্ব অধিকার রয়েছে, সেই অধিকার বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে হবে। তাদেরকে কোনো শর্তে বেঁধে রাখা যাবেনা। গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুনাগরিকতার সুযোগ তৈরি করতে হবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত হবে।
মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এর যৌথ আয়োজনে বিভাগে ‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে লোক প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আছমা বিনতে ইকবাল বলেন, ‘একসময় কন্যাশিশুকে পুড়িয়ে, মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করা হতো। ইতিহাসের পাতায় আমরা এমন ঘটনা দেখেছি। আমরা যদি রেনেসাঁর কথা বলি, যখন থেকে একটা পুনর্জাগরণ ঘটলো। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের বিকাশ ঘটলো তখন থেকে কিন্তু আগের ধারায় ছেদ পড়লো। মানুষ হিসেবে নিজেকে দাবি করে সবাই অধিকার রক্ষায় প্রতিবাদী হয়ে উঠলো। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বর্তমানে নারী একটি অবস্থান পেলো। এখনও কিন্তু সমতা আসেনি। নারীরা বিভিন্ন জায়গায় এখনও বঞ্চনার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। এইসময়ে এসেও আমরা নারীর সমতার কথা বলছি। আমাদের সেসব জায়গায় সবাই মিলেই কাজ করতে হবে। সবার মধ্যেই সেই সচেতনতাবোধ থাকতে হবে।’
সেমিনারে নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান কামালউদ্দিন কবির বলেন, ‘নারীর অধিকার, সমতার কথা আমাদের ইতিহাসেই আছে। আমাদের সংস্কৃতিতেই মিশে আছে। আমাদের চর্চাটা শুধু সেই জায়গায় হচ্ছেনা। আমরা নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলছি, নারী পুরুষের সমতা নিয়ে কথা বলছি, একটা গণতান্ত্রিক পন্থায় সমনাগরিকত্বের কথা বলছি। এর চর্চাটা আমাদের ইতিহাস থেকেই করতে হবে। আমরা অর্থগত দিক থেকে একেকজন একেক দিক থেকে চিন্তা করছি। কিন্তু এর যে আসল জায়গাটা সেই জায়গাটায় আমরা যাচ্ছিনা। পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে বের হয়ে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিয় করতে হলে এর অর্থগত দিকটায় সবারই একত্রিত হতে হবে। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি থেকেই এর চর্চা করতে হবে।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা আক্তার বলেন, ‘নারীর অধিকার, সমতা নিয়ে আমরা শুধুমাত্র হতাশার কথা শুনে আসছি। এখানে আমাদের আশার বাণীও আছে। আমরা পূর্বে যে জায়গায় ছিলাম সেই জায়গা থেকে এখন অনেকটা উত্তরণের পথে এসেছি। আগে নারী শিশুদের পড়াশোনারও পরিবেশ ছিল না। এখন সরকার অনেকটা কাজ করেছে। বৃত্তির ব্যবস্থা করায় নারীশিক্ষার প্রসার ঘটেছে। এতে নারীর অধিকার নিয়ে সচেতনতাও বেড়েছে। নারী এখন তার অধিকারের কথা বলতে পারছে। এখন একটা পথ তৈরি হয়েছে। এখন নিজেদের সচেতন করতে হবে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যম, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে৷ নাট্যকলাসহ অঙ্গনে নারীরা প্রতিহত হচ্ছে, সেখানে সবারই কাজ করতে হবে। তাহলে গণতান্ত্রিক পন্থায় সমনাগরিকতার পথ প্রশস্ত হবে। পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে বের হয়ে নারী-পুরুষের সমতা তৈরি হবে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক বর্ণনা ভৌমিক বলেন, এখন আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি, সমনাগরিকতার কথা বলি। কিন্তু যখন নির্বাচনের কথা আসে, ভোটের কথা আসে। তখন প্রার্থী বলতে কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কে একজন পুরুষের অবয়বই ভেসে ওঠে। এই জায়গায় আমাদের মস্তিষ্কে পুরুষতান্ত্রিকতা এখনও জেঁকে বসে আছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পুরুষতান্ত্রিকভাবে চিন্তা না করে আমাদের সমতাত চিন্তা করতে হবে, সাম্যের চিন্তা করতে হবে। মানুষ হিসেবে অধিকারের চিন্তা করতে হবে। নারীর মানুষ হিসেবে অধিকারটুকু নিশ্চিত করা গেলেই নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত হবে। গণতন্ত্রে সমনাগরিকতা নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির পরিচালক শাহনাজ সুমী। আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আলোচকবৃন্দ। এসময় বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ লাইভ/জবি
www.sangbadlive24.com এ প্রকাশিত সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও সবকিছুই আমাদের নিজস্ব। বিনা অনুমতিতে এই নিউজ পোর্টালের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। যে কোন বিষয়ে নিউজ/ফিচার/ছবি/ভিডিও পাঠান news.sangbadlive24@gmail.com এই ইমেইলে।


