মো: ইব্রাহিম: বাংলার বহুল আলোচিত প্রবীণ প্রবাদ; মাছে-ভাতে বাঙালি। পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ, এখন বাংলার সংস্কৃতির ও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠনে আমিষ (প্রোটিন) এর গুরুত্ব অপরিমেয়। উৎসের উপর ভিত্তি করে আমিষ দুই ধরনের হয়ে থাকে- ১.প্রাণীজ আমিষ এবং ২.উদ্ভিজ আমিষ।
পুষ্টির দিক বিবেচনায়, মাছ উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন নিরাপদ প্রাণীজ আমিষ,নিরাপদ চর্বি (ফ্যাট) যুক্ত অতিব সহজপাচ্য খাবার। প্রাণীজ আমিষের চাহিদার প্রায় শতকরা ৬০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে মৎস্য খাত।
মাছ খাওয়ার ১০ টি উপকারীতা-
১.শিশু থেকে প্রবীণ, সর্বস্তরের মানুষের জন্যই আর্দশ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যা দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
২.শিশুদের রিকেটস রোগ,কোয়াশিয়রকর রোগ-জীর্ণ শীর্ণ,হাড্ডিসার ও ম্যারাসমাস-শরীর ফুলে যাওয়া,দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণতা প্রভৃতি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করতে মাছের পুষ্টিগুণ অতুলনীয়।
৩.শিশুদের শারীরিক, মানসিক মেধা বিকাশে ও সুষম বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ কে প্রথম স্থানে রাখা অতিব জরুরি।
৪.মাছের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিড বিদ্যমান,অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ওমেগা-৩ থাকে যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল LDL(Low Density Lipoprotein) এর মাত্রা কমায়,রক্তের অণুচক্রিকাকে জমাট বাধতে প্রতিরোধ করে,ফলশ্রুতিতে, হার্টের সুরু সূক্ষ রক্তনালিতে চর্বি জমা বা বক্ল হতে পারে না অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক,ও উচ্চরক্তচাপ এর ঝুঁকি কমায়।
৫.মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট দ্রবণীয় ভিটামিন-এ, ডি,কে এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেকস।
৬.মাছে অধিক পরিমাণে খনিজ উপাদান -ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস, আয়োডিন, আয়রন,জিংক ও সেলেনিয়াম রয়েছে যা হাড় ও দাত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৭.মাছ আয়োডিন, আয়রণের নিরাপদ উৎস হওয়ায় গর্ভবতী,প্রসূতি মায়েদের রক্তশূন্যতা(অ্যানিমিয়া) দূরীকরণে সহায়ক এবং গলগণ্ড ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
৮. সূর্যের আলোর পাশাপাশি মাছ ভিটামিন -ডি এর আর্দশ উৎস যা ডেল্টা স্লিপ -গভীর ঘুম আসতে সহায়ক ও অধিক ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।
৯.ছোট মাছ-মলা,ঢেলা,ধারকিনা প্রভৃতি সম্পূর্ণ খাওয়া যায় তাই এগুলো উৎকৃষ্ট মানের খনিজ উপাদানের নিরাপদ উৎস।
১০.বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ থাকে এবং পালন করা মাছের তুলনায় নদী, নালা,খাল- বিলে পাওয়া মাছ উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও উৎকৃষ্টমানের হয়।
প্রাণীজ আমিষ(প্রোটিন) হিসেবে প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে প্রায় ১৭-২০ গ্রাম আমিষ এবং শুটকি মাছে ৬০-৭০ গ্রাম আমিষ থাকে।
অতএব, পরিশেষে বলা যায়, সুস্বাস্থ্য ও সুষ্ঠু সুন্দর জীবনযাপনে খাদ্য তালিকায় সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন বড় মাছ এবং ২-১ দিন ছোট মাছ রাখা অত্যাবশ্যক।
লেখক: শিক্ষার্থী, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।


