ঢাকারবিবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৩
  1. কৃষি ও পরিবেশ
  2. খেলা
  3. জাতীয়
  4. ধর্ম
  5. বিনোদন
  6. বিশ্ব
  7. ভ্রমণ
  8. মতামত
  9. রাজনীতি
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সাক্ষাৎকার
  12. সারাদেশ
  13. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ খবর

ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরিষার ভূমিকা

মতামত বিভাগ, সংবাদ লাইভ
এপ্রিল ৩০, ২০২৩ ১০:৩৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ড. মো. আব্দুল মালেক: কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় ভোজ্যতেল আমদানি করতে বাংলাদেশ সরকারকেপ্রতিবছর ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। এ ব্যয়ের একটি বড় অংশই কমিয়ে আনা সম্ভব যদি দেশে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। সরকারের লক্ষ্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে তেল ফসলের উৎপাদন ২৮ লক্ষ টসনে উন্নীত করা, যা বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছরের উৎপাদনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসেব অনুযায়ী সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টন পামতেল এবং ৭ লাখ ৮০ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। সব মিলিয়ে ২১ লাখ ৩৬ হাজার টন পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়। এতে ব্যয় হয় ১৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। দেশীয় ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা ২৪ লাখ মে. টনের বিপরীতে দেশের সরিষা, তিল এবং সূর্যমুখী হতে প্রাপ্ত ভোজ্যতেল উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ মে. টন অর্থাৎ অর্থাৎ আমাদের চাহিদার সিংহভাগই এখনো আমদানি নির্ভর।

আগামী তিন বছরে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৪০ ভাগ ভোজ্যতেল স্থানীয়ভাবেই উৎপাদনের কাজ করছে দেশের কৃষিবান্ধব সরকার কৃষি মন্ত্রণালয়। উন্নত জাত ও প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন হচ্ছে। যার বেশির ভাগই সরিষা। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস তথা দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণে প্রয়োজন প্রায় ২৪ লাখ হেক্টর জমি তেলজাতীয় ফসল সরিষাকে প্রাধান্য দিয়ে আবাদের আওতায় আনা প্রয়োজন।

তেলবীজ ফসল হিসেবে বাংলাদেশে সরিষা, তিল, চিনাবাদাম, সয়াবিন ও সূর্যমুখী প্রধান হলেও ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষাই প্রধান এবং বর্তমানে সামান্য পরিমাণে আছে সূর্যমুখী। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ও আমদানির হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাথাপিছু দৈনিক ৪০ গ্রাম ধরে ২০৩০ সালে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা দাড়াবে প্রায় ২৮.০০ লক্ষ টন। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে তেল ফসলের মধ্যে সরিষার চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ানোসহ উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা অন্তর্ভূক্তিই একমাত্র এবং প্রধান উপায়। উল্লেখ্য ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেলে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ শতকরা ৩০ ভাগের নিচে ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ শতকরা ৫০ ভাগের উপরে এবং ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ এর অনুপাত ১:২ বিদ্যমান, যা পুরোপুরিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত।

বাংলাদেশে আবাদকৃত তেলবীজ আবাদী জমির প্রায় ৬০% সরিষা চাষ করা হয় এবং  থা দেশের প্রায় সব জেলাতেই সরিষার চাষ হয়ে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় দেশে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৬.০ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদে উৎপাদিত সরিষার পরিমান ছিল ৭.৩৫ লক্ষ মে. টন এবং চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সরিষার আওতায় জমির পরিমান বেড়েছে প্রায় ২.০ লক্ষ হেক্টর। ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষা তেলের চাহিদা বৃদ্ধি, অনুকূল আবহাওয়া, সরিষা আবাদে কৃষকের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারিত হওয়ায় চলতি অর্থবছরে সরিষার উৎপাদনও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বৃদ্ধির পেয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক “তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প” এর আওতায় প্রকল্প মেয়াদে (জুন ২০২৫ খ্রি. পর্যন্ত) কৃষিমন্ত্রী ড. মো, আব্দুর রাজ্জাক এমপি মহোদয়ের প্রত্যাশার অনুকূলে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০% দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মিটানো সম্ভব হবে। সরিষাই যেহেতু এদেশের তেলজাতীয় ফসলের মূল ভুমিকায় রয়েছে তাই ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বৃদ্ধিসহ উচ্চফলনশীল জাতের দ্রুত সম্প্রসারণ ও উৎপাদন কলাকৌশলে আধুনিক পদ্ধতির অনুসরনই একমাত্র উপায়।

সরিষার মোট উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাষের আওতায় উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহনশীল জাতের অন্তর্ভূক্তিকরণই প্রধান উপায়। বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) মিউটেশন প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছে স্বল্প জীবনকালের উচ্চফলনশীল, প্রতিকূলতা সহনশীল ও সর্বাধিক জনপ্রিয় জাত বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯, বিনাসরিষা-১১ ও বিনাসরিষা-১২ আর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত বারি সরিষা-১৪ ও বারি সরিষা-১৭ যেগুলোর জীবনকাল ৮০-৮৮ দিন এবং গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১.৫-২.০ টন। প্রচলিত দেশি জাতের সরিষার স্থলে শুধুমাত্র বিনা ও বারি উদ্ভাবিত উল্লিখিত সরিষার জাতসমূহ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দেশের সরিষা উৎপাদন অনেকাংশেই বৃদ্ধি করা সম্ভব।

বাংলাদেশে সাধারণত আমন ধান চাষের পর জমি পতিত থাকে এবং এর পরে সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়। তেল উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজন আমন ধানের পর জমি পতিত না রেখে স্বল্পমেয়াদে সরিষার আবাদ করা। আর এজন্য দেশের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে স্বল্প জীবনকালের (১০০ থেকে ১২০ দিন) অথচ উচ্চফলনশীল আমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যেগুলো মূল জমিতে চারা রোপন/লাগানোর ৮০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যেই ঘরে তোলা যায়। এরপর জমি পতিত না রেখে উন্নত জাতের সরিষা চাষ করা হবে যেটি ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে পরিপক্ক হওয়ায় পরবর্তীতে একই জমিতে আবার বোরো চাষ করে প্রচলিত দুই ফসলী জমিকে তিন ফসলীতে রুপান্তর করাও সম্ভব হচ্ছে।

শস্য বিন্যাসে বিনা উদ্ভাবিত বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯, বিনাসরিষা-১১, বিনা সরিষা১২, বারি সরিষা-১৪ ও বারি সরিষা-১৭ জাতের সরিষা অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সাময়িক পতিত জমি সহজেই চাষের আওতায় আনা সম্ভব। বাংলাদেশে ২১.০ লক্ষ হে. জমি আমন-পতিত-বোরো শস্য বিন্যাসের অন্তর্ভূক্ত (সূত্র: ডিএই)। স্বাভাবিক চাষাবাদ পদ্ধতিসহ শূন্যচাষ ও রিলে চাষ পদ্ধতিতে আবাদযোগ্য স্বল্প জীবনকালের বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯, বিনাসরিষা-১১ ও বিনাসরিষা-১২ আবাদের মাধ্যমে উল্লিখিত জমির অনেকটাই শস্য বিন্যাস পরিবর্তন করে আমন – সরিষা – বোরো ধানে রূপান্তর করে অতিরিক্ত সরিষার উৎপাদন দিয়ে দেশীয়  চাহিদার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব।

দেশের প্রায় ১.৭ লক্ষ হেক্টর চরের পতিত জমিতে সরিষার আধুনিক ও প্রতিকূলতা সহনশীল (বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯, বিনাসরিষা-১১ ও বিনাসরিষা-১২) জাতের সরিষা চাষের আওতায় এনে সরিষা উৎপাদন করে অতিরিক্ত প্রায় ২.২ লক্ষ টন সরিষা উৎপাদন করা সম্ভব।

বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলসহ অনেক জমিই এক ফসলী এবং ঐসব জমির অধিকাংশেই দীর্ঘ জীবনকালের আমনধান আবাদ হয়ে থাকে, ফলে আমন ধান সংগ্রহ করতে হয় ডিসেম্বর মাসে এবং আমনধান সংগ্রহের পর সব জমি পতিত থাকে। নাবিতে বপনোপযোগী বিনা উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী এবং শূন্যচাষে বা প্রয়োজনে রিলে চাষ পদ্ধতিতে আবাদযোগ্য বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯, বিনা সরিষা১২ ও বারি সরিষা-১৮ জাতগুলো সহজেই এ এলাকায় সম্প্রসারণ করে উৎপাদন অনেকাংশেই বৃদ্ধি করা সম্ভব।

বাংলাদেশের সরিষা বপন পরবর্তী অগ্রহায়ণ (মধ্য নভেম্বর হতে মধ্য ডিসেম্বর) মাসে নিম্নচাপজনিত বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে সাময়িক জলাবদ্ধতার কারণে দেশি জাতের সরিষা টরি-৭’সহ অন্যন্য উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা নষ্ট হলেও বারি সরিষা-১৮, বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯ ও সম্প্রতি উদ্ভাবিত বিনাসরিষা১২ জাতগুলো ৪-৬ দিনের সাময়িক জলাবদ্ধতা/জলমগ্নতা সহিষ্ণু হওয়ায় কৃষক ফসলহানি হতে রক্ষা পায়।

উচ্চফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদী বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯, বিনাসরিষা-১১, বিনাসরিষা-১২, বারি সরিষা-১৪ ও বারি সরিষা-১৭ জাতের আবাদ নিশ্চিত করা, শস্য বিন্যাসে উল্লিখিত সরিষার জাতসমূহের অন্তর্ভূক্তকরণসহ পতিত জমি ও চরাঞ্চলে সরিষার জাতসমূহের আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানো সক্ষম।

বঙ্গবন্ধুকণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ‍দিকনির্দেশনায় কৃষিবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং সুযোগ্য কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের দক্ষ নেতৃত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণে আগামী তিন বছরে দেশের ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমপক্ষে ৪০% কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই সম্ভব হবে। উল্লিখিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বিনা উদ্ভাবিত সরিষার জাত বিনাসরিষা-৪, বিনাসরিষা-৯, বিনাসরিষা-১১ ও বিনাসরিষা-১২ এবং বারি উদ্ভাবিত বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭ ও বারি সরিষা-১৮।

লেখক: পরিচালক (গবেষণা), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ

www.sangbadlive24.com এ প্রকাশিত সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও সবকিছুই আমাদের নিজস্ব। বিনা অনুমতিতে এই নিউজ পোর্টালের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। যে কোন বিষয়ে নিউজ/ফিচার/ছবি/ভিডিও পাঠান news.sangbadlive24@gmail.com এই ইমেইলে।