আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর :: দেশে ৫৩ টি পাবলিক ও ১০৫টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মোটা ১৫৮টি! এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে যেখানে ২,২৮৩ টি অধিভুক্ত কলেজে অধ্যয়ন করছে ২৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী।
সম আয়তনে পৃথিবীর অন্য কোন ভূখন্ডে এতো বেশী বিশ্ববিদ্যালয় আছে কিনা সেটা নিয়ে দারুন একটা প্রশ্ন হতে পারে। কিন্তু এতো বেশী বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রের জন্য জন্য ‘আচার্য’ মাত্র যে একজন, এই ঘটনা আর পৃথিবীর ইতিহাসে নাই- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আমাদের সকল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রেজুয়েটদের অভিভাবক হলেন দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি। যদিও কনভোকেশনে যোগ দেয়া ছাড়া পুরো বছরে মহামান্য রাষ্ট্রপতি’কে অন্য কোথাও খুব একটিভ দেখা যায়না। নিয়ম অনুযায়ী, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবছর কনভোকেশন হওয়ার কথা। সে হিসেবে প্রতিবছর কনভোকেশন যদি হতো, ৩৬৫ দিনের বছরে একজন রাষ্ট্রপতিকে বছরের অর্ধেক দিন কেবল ও কেবলমাত্র কনভোকেশনেই যোগ দিয়ে তার দায়ীত্ব শেষ করতে হতো! ভাবা যায়?
এখন নিয়ম আনুযায়ী কাজ হচ্ছেনা যেহেতু, বেশীর ভাগ পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কনভোকেশন হয় পাঁচ বছর পরপর। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরে একবার! অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন পর্যন্ত কোন কনভোকেশনই হয়নি! ফলে মূল সনদ হাতে পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাড়াচ্ছে!
এতে সমস্যা আসলে কার হচ্ছে?
আমরা সবাই জানি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর পর সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ‘প্রভিশনাল সার্টিফিকেট’ দেয়া হয়। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘সাময়িক সনদ’।
আর ‘অরিজিনাল সার্টিফিকেট/ মেইন সার্টিফিকেট’ এই একটা মূলা ঝোলানো আছে কনভোকেশন নামক ‘উৎসবের’ নিমিত্তে! মানে কনভোকেশন ছাড়া মূল সার্টিফেট দেয়া হয়না!
এর ফলে সমস্যায় পড়ছে উচ্চশিক্ষায় বিদেশগামী অনেক শিক্ষার্থী। বাইরে অনেকে দেশে চাকরি পেয়েও জয়েন করতে পারছে না এ সমস্যার কারণে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর সাময়িক সনদ গ্রহন করছে না। অনেক দেশ চাকরি’র জব ভিসার ক্ষেত্রেও মূল সনদকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে!
আর আমরা বাধ্যতামূলক করে রেখেছি ‘কনভোকেশন’, তাও ‘মূল সার্টিফিকেট’ জিম্মি করে!
এদিকে আমাদের বলদকাঠামো যেহেতু এখন পর্যন্ত ‘কনভোকেশন’ এর মূলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের এই সুযোগগুলো গ্রহনে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে, তাই দেশের ১৫১টা দালানকাঠামোকে আসলে কতো ‘বিশ্ব-বিদ্যালয়’ বলা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে!
২০২৩ সালে এসেও সেই ১৯২১ সালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রথা ধরে রাখা আমাদের অনাগ্রসরতার সবচে বড় উদাহরণ!


