নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম, দুটি বাসভবন ব্যবহার, ক্যাম্পাসে অনিয়মিত থাকা, উন্নয়নকাজের ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশ। গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন সংগঠনটির এক অংশের শিক্ষকেরা।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের অপর অংশ। প্রতিবাদে বলা হয়, আগামী বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। নির্বাচনে ভরাডুবি বুঝতে পেরে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম’ গঠিত হয়। তবে দুই বছর আগে শিক্ষক ফোরামে ভাঙন ধরে। ওই সময় একটি অংশ সংগঠন থেকে বেরিয়ে যান। তবে বের হয়ে যাওয়া অংশের নামও ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম’। দুই বছর ধরে একই নামে শিক্ষকদের দুটি সংগঠন চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সোনালি দল হিসেবে পরিচিত।
গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কমপ্লেক্সের সম্মেলনকক্ষে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে নিজের পছন্দের কয়েক ব্যক্তিকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। নিয়োগেও অনিয়ম ধরা পড়েছে। নিয়ম ভেঙে দুটি বাসভবন ব্যবহার করলেও উপাচার্য ক্যাম্পাসে অনিয়মিত। তিনি সব সময় ক্যাম্পাসে না থাকায় নানা দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তাঁর ব্যর্থতার কারণে ৬৫৯ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প ব্যর্থ হয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের ওই অংশের সভাপতি এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক পূর্বা ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক সাইদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগকে বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত আখ্যা দিয়ে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের অপর অংশ লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ওই অংশের সভাপতি মো. আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, উপাচার্যের নিয়োগের প্রায় সাড়ে তিন বছর হয়ে গেছে। কেউ কখনো কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি। নির্বাচনের দুই দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণ হলো, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন প্রভাবিত করা। এ ছাড়া কোনো অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারেননি তাঁরা।
এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সভাপতি এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বিষয়ে উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। কিন্তু ভ্রাতৃপ্রতিম শিক্ষক সংগঠনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করিনি। কাজেই প্রতিবাদ জানালে উপাচার্য বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো উচিত। শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর কারণ কী? নির্বাচন প্রভাবিত করতে সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগ সঠিক নয়।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লুৎফুল হাসান বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তার কোনোটাই সঠিক নয়। আমার সময়কাল শেষের দিকে। এর মধ্যে কোনো অনিয়ম হয়নি।’ গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের দুই অংশের মধ্যে মতবিরোধ আছে স্বীকার করলেও তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
সংবাদ লাইভ/এবি


