যান্ত্রিক সভ্যতার ইট-বালি, ধুলোমাখা দেয়ালে বন্দি ব্যস্ত নগর জীবনের কোলাহল থেকে মাঝে মাঝে ছুটে পালাতে কার না মন চায়? কিন্তু চাইলেই তো আর সবসময় পালানো যায় না। নানা সীমাবদ্ধতায় আমাদের জীবন বন্দি। এই সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে যদি আপনার একদিনও সময় থাকে তবে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন। যারা ঢাকা বা এর আশেপাশে থাকেন তারা খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ময়মনসিংহে অবস্থিত প্রকৃতিকন্যাখ্যাত ময়মনসিংহে অবস্থিত ১২০০ একরের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাস থেকে। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত এই ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবেই। ক্যাম্পাসের মাঝ দিয়ে চলে গেছে রেল লাইন। তাই দেরি না করে বেরিয়ে পড়ুন আজই। ফুলে-ফলে সাজানো ক্যাম্পাস দেখে মনে হবে প্রতিটি স্থান যেন এক একটি নার্সারি কিংবা বন।
এ ক্যাম্পাসে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন, পৃথিবীখ্যাত জার্মপ্লাজম সেন্টার, মুক্তিযুদ্ধের সৃতিস্তম্ভ বিজয়-৭১’, গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ বদ্ধভূমি, শহীদ মিনার, নদের পাড়, বৈশাখী চত্বর, এক গম্বুজ বিশিষ্ট দেশের বৃহৎ কেন্দ্রীয় মসজিদ, দেশের একমাত্র কৃষি মিউজিয়াম, ফিশ মিউজিয়াম, দেশের দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কেন্দ্র- বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), আম বাগান, লিচু বাগান, নারিকেল বাগান, কলা বাগান, সুবিশাল পানির ট্যাংক, ৬টি অনুষদীয় ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন, কেন্দ্রীয় গবেষনাগার, দুই হাজার আসন বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন ভবন, প্রকৌশল ভবন, অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, ৬৫৭টি আবাসিক ইউনিট, ১২টি ফার্ম, ফিল্ড ল্যাব, ক্লিনিক, ওর্য়াকশপ, শিক্ষার্থীদের জন্য মনোরম ১৩টি হল, স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম, ঈশাঁ খা হল লেক, হেল্থ কেয়ার সেন্টর, ফ্যাকাল্টি করিডোর, বঙ্গবন্ধু চত্বর, প্রেম বারান্দা, মারন সাগর, ডরমেটরি, কমিউনিটি সেন্টার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (কেবি কলেজ), কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুল (কেবি হাই স্কুল), নৈশ বিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা উল্লেখযোগ্য অংশ।
ক্যাম্পাসে প্রবেশের পরই যা দেখবেন :
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করেন প্রথমেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশের নরম হাওয়ায়। প্রধান ফটকের সাথেই দেখা মিলবে সাজানো গোছানো পরিপাটি প্রাচীরে ঘেরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (কেবি কলেজ)।
গণহত্যার সৃতিস্তম্ভ বদ্ধভূমি কেবি কলেজ পার হলেই হাতের বাম পাশের রাসত্মায় ঢুকলে দেখতে পাবেন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার, গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ বদ্ধভূমি।
বৈশাখী চত্বর প্রধান সড়ক দিয়ে শিক্ষকদের আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে একটু এগোলেই নিরাপত্তা জোন-১ এর হাতের বাম পাশের রাস্তায় বৈশাখী চত্বর। নদের পাড় ঘেষেঁ গড়ে ওঠেছে চত্বরটি। নদের পাড়ে বাধা ঘাটে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিতেই পারেন। সারা বছর নিরবে পড়ে থাকে পহেলা বৈশাখকে বরণ করার জন্য। সেদিন এখানে ছোটখাটো মেলাও বসে। শিক্ষার্থীরা নানাসাজে ভিড় জমায় এখানে। মিলতে পাড়ে বৈশাখী গানের আসরও।
বিজয়-৭১:
প্রধান সড়ক দিয়ে আসতে থাকুন। শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, কামাল রঞ্জিত মার্কেট (কেআর মার্কেট) মেয়েদের চারটি হল পেরিয়ে বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন পার হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এলেই চোখে পড়বে মুক্তিযুদ্ধের সৃতিস্তম্ভ বিজয়-৭১। বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্য। চারপাশে ফুলগাছবেষ্টিত মনোরম পরিবেশ। স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে একটা ছবি তুলে নিতে পারেন।
লো অ্যান্ড ব্রীজ:
ছবি তোলার জন্য যেতে পারেন জিটিআই সংলগ্ন লেকের উপর নির্মিত লো অ্যান্ড ডাউন ব্রীজে। এটি সংক্ষেপে লন্ডন ব্রীজ নামেই বেশি পরিচিত।
প্রিয়জনের হাত ধরে হাঁটেন পারেন আনমনে:
রেল লাইনে আনমনে আপনজনের হাত ধরে কিছুক্ষণ হাঁটতে পারেন। অথবা লিচু বাগান, হর্টিকালচার সেন্টার, আম বাগান, কলা বাগানের রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়াতে পারেন নির্বিঘ্নে। বঙ্গবন্ধু চত্বর ফ্যাকাল্টির কড়িডোর বা নদের পাড়ে বসে বসে ও সুন্দর সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন।
খাওয়া দাওয়া:
খাওয়া-দাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জব্বারের মোড়, রেল লাইন, কেআর মার্কেট, করিম ভবনে রয়েছে অনেক খাবার হোটেল। এসব হোটেল সবসময় আপনি মাছ, মাংস, ভর্তা ভাত, খিচুরি সব পাবেন স্বল্পমূল্যে। টিএসসিতে ও খেতে পারেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের সাথেই আশপাশে ফসিলের মোড়, রেশষ মোড়ে পাবেন অনেক হোটেলের দোকান। চাইলে বাড়ি ফেরার সময় ময়মনসিংহ শহর থেকে স্পেশাল মালাইকারি মিষ্টি নিয়ে আসতে পারেন। মালাইকারির জন্য মা-মনি সুইটস এবং কৃষ্ণা কেবিন বিখ্যাত।
যেভাবে আসবেন:
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস ছেড়ে যায় প্রতি ১৫-২০ মিনিট পরপর। সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। ভাড়া নেবে ২০০-৩২০ টাকা। ময়মনসিংহ এসে মাসকান্দা বা ব্রীজ মোড় নামিয়ে দিবে। মাসকান্দা হতে ক্যাম্পাসে আসতে অটোতে লাগবে সবোর্চ্চ ২০ টাকা করে। ব্রীজ মোড় থেকে অটোতে নিবে ১০ টাকা। এ ছাড়া আপনি ট্রেন-এ করেও যেতে পারেন ময়মনসিংহ। ট্রেন স্টেশন থেকে ক্যাম্পাস থেকে অটোতে ভাড়া নিবে ১৫-২০ টাকা।


