প্রিয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
তোমাকে যখন লিখতে বসেছি, তখন তোমার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা অধ্যায়টির প্রায় শেষপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। সবুজে ঘেরা দালান, একপাশে ব্রহ্মপুত্র নদ আর মাঝখানে সাপের মতো লম্বা এক রেললাইন – সবুজ এই স্বর্গটিই তুমি ধারণ করে আছো। কোন এক শুভক্ষণে তোমার নন্দন কাননের সাম্প্রতিক সংস্করণে বিচরণ শুরু করে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে এখন আমার পতন অতি সন্নিকটে। আমি ভালো করেই জানি, এরপর যত সুবিধাজনক জায়গাতে যাই না কেন বাকৃবি’র মতো করে জীবনযাপন করতে পারবো না। তাই স্বর্গপতনের আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের লোভ সামলাতে পারছি না।
দীর্ঘ একটা সময় এক জায়গায় থাকলে সেখানে শিকড় গজিয়ে যায়, সেই শিকড় টেনে উপড়ানোও যায় না। আচ্ছা, সময়কে কী ঘুরিয়ে দেওয়া যায় না? সেইসব সময়ে খুব ইচ্ছে করে ফিরে যেতে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই তোমার বুকে সবগুলো বর্ণিল বাতি একসাথে জ্বলে উঠে, ঝি ঝি পোকারা ডাক শুরু করে। আমবাগান, নদের পাড়ে হলুদ আলো নিয়ে নেমে আসে জোনাকিরা। শেয়াল মামারা জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে শুরু করে তাদের মহড়া। জোৎস্নার আলোতে নদের বুকে নৌকায় গেয়ে ওঠে প্রাণোচ্ছল তরুণ-তরুণীরা।
দিনশেষে কে.আর. মার্কেট কিংবা জব্বার মোড়ের এককাপ চা ব্যস্ত দিনের ক্লান্তি দূর করার রসদ। সারি সারি গাছ, দৃষ্টিনন্দন সব বিল্ডিং, বহতা নদ, সুবিস্তৃত লেক, বিজয়’৭১ ভাস্কর্য, পাখির ডাক, ট্রেনের হুইসেল তোমার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বসে থাকা মাছরাঙা ছোট্ট একটা মাছ ঠোঁটের মাঝখানে চেপে ধরে পরেক্ষণেই উড়াল দিচ্ছে শূণ্যে। দেবদারু গাছে ছোট্ট বাসাটায় ঘুঘু দম্পতির একজোড়া ফুটফুটে ছানা কিচিরমিচির করছে। দিনব্যাপী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে ছুটছে একটা বৃহৎ স্বপ্নকে বুকে আঁকড়ে ধরে। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে গবেষকগণের নির্জন রুমগুলোতেও। এমন অপরূপ দৃশ্য তোমাকে প্রতিনিয়ত আলোকিত করে তুলেছে, তুলছে।
নদের ওপার থেকে আসা হরেক রকম ব্যবসায়ীরা মনোরম করে তোলে তোমার ভোরের সূর্য। ষড়ঋতুর পালাবদলও হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায় তোমার কল্যাণে। গ্রীষ্মের আগমনে রুক্ষ প্রকৃতি, হঠাৎ কালো মেঘের আনাগোনা আর কালবৈশাখী ঝড়। বর্ষার আগমনে প্রকৃতির সতেজ হয়ে উঠা, স্টেডিয়ামে শরতের কাশফুল, ফিল্ডে হেমন্তের সোনালি ধান, শীতের পিঠাপুলি ও কুয়াশার ধুম্রজাল কিংবা বসন্তে ফোটা হরেক রকম ফুল। রং বেরংয়ের ফুলের সমাহার দেখে আগন্তুক পথভুলে ফুলের নার্সারিতে ঢুকে পড়েছে মনে করতেই পারেন!
সুবিশাল হৃদয়পট নিয়ে ১৯৬১ সাল থেকে তোমার পথচলা। পৃথিবীখ্যাত জার্মপ্লাজম সেন্টার, সুপরিচিত ও দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষের সংগ্রহ নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন, দেশের দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কেন্দ্র, দেশের একমাত্র কৃষি মিউজিয়াম, ফিশ মিউজিয়ামসহ বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনার তুমি গর্বিত অবলম্বন।
আমি চাই শিক্ষা ও গবেষণাসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিকাশ অব্যাহত রাখতে এবং জাতীয় উন্নয়নে তোমার অর্জন আরও ফলপ্রসূ করতে, বিদ্যমান সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সমাধান করতে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করে তুলবে।
তুমি এখন পর্যন্ত আমাকে যা দিয়েছো তা যদি আমার জীবনের পরবর্তী ধাপগুলোতে ব্যবহার করতে পারি, তবেই তোমার ঋণ ও গুরুদক্ষিণা শোধের ইচ্ছাটা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। ভালো থেকো, ভালো রেখো।
তোমারই গুণমুগ্ধ
মোঃ জুবায়ের ইবনে কামাল
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ; সেশন ২০১৩-১৪


