আশরাফুল ইসলাম আকাশ, বগুড়া: বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পৃথিবী দিন দিন হুমকির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গেল কয়েক বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, মুষলধারে বৃষ্টি, তাপপ্রবাহে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি ও হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। পৃথিবীকে মারাত্মক বিপর্যয় থেকে রুখতে পরিবেশ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত বনায়ন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পদক্ষেপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া।
সেই লক্ষ্যে পরিবেশ বাঁচাতে সাইকেলে চেপে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পাড়ি দিচ্ছেন চার তরুণ। সারাদেশের যুব সমাজকে উজ্জীবিত করতে ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ স্লোগানে এই আয়োজন করেছে পতেঙ্গা সাইক্লিস্ট গ্রুপ। ইতোমধ্যে এ যাত্রায় অংশ নিয়েছে পতেঙ্গা সদরের ৪ শিক্ষার্থী।
তারা হলেন- শহিদুল হক তানভীর (২২), ইসলাম হোসেন নয়ন (২১), মেহেরাব হোসেন অভি (২০) ও মোঃ সাইফুল ইসলাম (২০)।
দেশের সবচেয়ে লম্বা হাইওয়ে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ। এ পথের দূরত্ব প্রায় ১০৭১ কিলোমিটার। পরিবেশ বাঁচানোর স্লোগান নিয়ে দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিবেন পতেঙ্গা সাইক্লিস্ট গ্রুপের চার সদস্য।
গেল ২১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে সাইকেলে চেপে যাত্রা শুরু করেন তারা। এরপর পর্যায়ক্রমে পঞ্চগড় হয়ে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, জয়পুরহাট থেকে সোজা বগুড়ায়। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে যাত্রা বিরতিতে বগুড়া সার্কিট হাউজে তাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসলাম হোসেন নয়ন জানালেন, আমরা একটা পরিবর্তনের যুগে বসবাস করছি। এতে করে আমরা শুধু ডিজিটালের দিকেই অগ্রসর হচ্ছি। কিন্তু পরিবেশ যে হুমকির মুখে, সেদিকে নজর খুব কম মানুষেরই। এজন্য আমরা গ্রুপের কয়েকজন সদস্য আলোচনা করে এই লং রাইডে অংশ নিই। যার মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘গাচ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’।
পরিবেশ রক্ষায় গাছ যেমন প্রয়োজনীয় বন্ধু, তেমনি পরিবেশ দূষণ রোধে বাই-সাইকেলও সহযোগী বন্ধু। সে কথায় জানালেন নয়ন, পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। একই সাথে পরিবেশ দূষণ রোধে সাইকেলও আমাদের উপকারী বন্ধু। সেজন্য কম দূরত্বের গন্তব্যে আমাদের সাইকেল চালিয়ে যাওয়াই উচিত। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি নিজেদের মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমও হবে। যার প্রতিদান হিসেবে সুন্দর পরিবেশ ও সুস্বাস্থ্য উপহার পাব।
তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পৌঁছাতে ১২টি জেলা অতিক্রম করতে হবে তাদের। ইতোমধ্যে পাঁচটি জেলা পাড়ি দিয়েছেন তারা। এরপর সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং সবশেষ টেকনাফ জিরো পয়েন্টে গিয়ে সাইকেল থেমে যাবে।
পতেঙ্গা সাইক্লিস্ট গ্রুপের আরেক সদস্য শহিদুল ইসলাম তানভীর বললেন, আামদের গ্রুপের সদস্যরা বছরের নানা সময়ে বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে ‘বাইক ফ্রাইডে’, ‘নাইট রাইড’, ‘লং রাইড’, ‘এডভেঞ্চার রাইড’, এবং ‘সিটি রাইড’ রয়েছে। মূলত আমরা এসব রাইডের মাধ্যমে দেশের যুব সমাজকে সুস্থ বিনোদন ও মাদক মুক্ত সমাজ গড়ার আহ্বান জানাতে চাই। যাতে তারা আগামী দিনে সুন্দর একটি প্রজন্ম উপহার দিতে পারে।
প্রায় দশদিনের এই ইভেন্টে গড়ে ১০ ঘন্টা সাইকেল চালাচ্ছেন পতেঙ্গা গ্রুপের সদস্যরা। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রা বিরতি দিয়ে দুপুরের খাবার এবং বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করছেন তারা।


