আগামীকাল ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মধ্যে যেমন উৎসব মুখর অবস্থা বিরাজ করছে সাধারণ জনগণের মাঝেও এর যেনো কমতি নেই। বিশেষ করে যারা তরুণ নতুন ভোটার তাদের মধ্যে আমেজ বেশি কাজ করছে। নতুন ভোটারদের তালিকায় একটি বড় অংশ দখল করে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষাথীরা। চলুন শোনা যাক বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষার্থীরা আসন্ন নির্বাচনকে নিয়ে কি ভাবছে।
ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল কাফী বলেছেন, রাষ্ট্রের মৌলিক চারটি উপাদানের একটি রাষ্ট্রপ্রধান৷ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নির্বাচনে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন জনগণের মৌলিক অধিকার। নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ এতে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে সুবিধা হয়। কিন্তু বর্তমান নির্বাচনে বৃহৎ অংশ প্রতিযোগিতার বাহিরে থেকে গেছে। যেটা আসলে পরবর্তী রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শঙ্কার বিষয়৷ তাই দেশের রাজনীতিবিদদের দলমত নির্বিশেষে নিজের কথা চিন্তা না করে জনগণের কথা ভেবে আগানো উচিৎ বলে আমি মনে করি।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আলভী আহমেদ বলেছেন, একটি দেশের নির্বাচনের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কেমন হবে। তাই বাংলাদেশের আগামী ভবিষ্যতের জন্য এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হওয়া অনেক প্রয়োজন। কেননা এবারের নির্বাচনে বিদেশিদের নজর রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে দেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ। আশা করি নির্বাচন কমিশন এবারের নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নিবে। ভোটের দিন যাতে কোনো নাশকতা না হয়, মানুষের জীবনের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে। তবে প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ নিলে নির্বাচন আরো জমজমাট হত বলে মনে করি।
একই বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পিয়াস কুমার পার্থ বলেছেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচন মানেই উৎসবমুখর পরিবেশ হওয়ার কথা। কিন্তু এদেশের নির্বাচন এলেই নির্বাচন কেন্দ্রিক বিভিন্ন সহিংসতা ঘটনা আমরা দেখতে পাই। তেজগাঁওয়ে দুষ্কৃতীকারীদের দেওয়া আগুনে সন্তানকে আঁকড়ে ধরে মা ও সন্তানের উভয়ের মৃত্যু পুরো দেশকে কাঁদিয়েছে। এখন যখন অনুচ্ছেদটি লিখছি, তখনো রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনের আগুনে চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। সভ্য দেশের মানুষ হিসেবে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা কাম্য নয়। তাছাড়া নির্বাচনে কে জিতবে তা অনিশ্চিত হওয়ার কথা। কিন্তু একটি বড় বিরোধী দল বিভিন্ন পক্ষের অনুরোধের পরও অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনের আমেজ কিছুটা কমেছে। বিষয়টি দুঃখজনক। এজন্য প্রচার-প্রচারণার জৌলুসও স্বভাবতই কমেছে। পরিশেষে ভোটারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে এবং বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে এই আশা ব্যক্ত করছি।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসান বলেছেন, নির্বাচন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে অনিশ্চয়তা থাকবে। আগে থেকে কেউ বলতে পারে না কারা বিজয়ী হবে। জনগন তার ভোটের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে তার শাসক নির্বাচন করবে। কিন্তু এইবার সে যাকেই ভোট দিক না কেন তার ভোটে শাসক পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। ফলে দলকে বা শাসককে জনগণের কাছে আসতে হয় না কিংবা জবাবদিহি করতে হয় না। একটা গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের হাতে তার শাসক নির্ধারণের সুযোগ থাকে। ফলে দেশ শাসনের সময় শাসককে অবশ্যই জনগণের কথা চিন্তা করতে হয়। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতে সকল দলকে নিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে নির্বাচন করা উচিত।
এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জসিবুল হাসান বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাপা ছাড়া নির্বাচনে আছে ছোট ছোট দল। এ নির্বাচন জনপ্রিয় বিরোধী দলের উপস্থিতি নেই। বিরোধী দলের মতে নির্বাচন অংশগ্রহন মূলক করার জন্য ডামি(স্বতন্ত্র) প্রার্থী মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সমথর্কদের মধ্যে মারামারি, সহিংসতা, নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে, আওয়ামী লীগের তৃণমূল এ কুন্দোল সৃষ্টি করছে। নির্বাচনে জনগণের মধ্যে আমেজ নেই ও প্রচারণাও জমজমাট হচ্ছে না। বিগত নির্বাচনে দেখা যায় নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সমর্থক অর্ধ-শতাধিক। বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থনপ্রাপ্ত দলগুলোর উপস্থিত ছাড়া নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণ হবে তা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন। শেষ মুহূর্তে জাপা ও তৃণমূল বিএনপি প্রার্থীরা ও নির্বাচন বর্জন করছে। সকলের প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে, গণতন্ত্র মেনে, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহন মূলক নির্বাচন।
সময় ঘনিয়ে আসছে, এখন দেখার বিষয় ভোটেরের উপস্থিত ও জানুয়ারীর নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্যতা পায়।
টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের হোসেন আল নোমান বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি। নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে সকলের মাঝে ব্যাপক আমেজ কাজ করছে। প্রার্থীরা প্রচারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তাঁদের মূল লক্ষ্য অধিকসংখ্যক ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসা। পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার তৈরি, মাইকিংসহ নেতাকর্মীদের চা-নাস্তা খরচের নামে প্রার্থীরা হাতখুলে অর্থ ব্যয় করছেন। আর এর প্রভাব পড়ছে কিছু ব্যবসায়। বিশেষ করে ছাপাখানা, চায়ের দোকানের ব্যবসা এখন রমরমা। প্রতি বছরের মতো এবারো অনেক নতুন ভোটার আছেন যারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। তবে এক অশুভ শক্তি বাংলাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তাদের অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাঞ্চাল করা। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে এটি নিশ্চিত করতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। ফলে সকলেই আশাবাদী আগামী ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সকলে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে দেশের উন্নয়ন এর কাজ ত্বরান্বিত করবে। নির্বাচিত সরকার দেশকে আরো উন্নত করবে এবং বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।


