ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’—এ প্রতিপাদ্যে আজ বুধবার সারাবিশ্ব পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী-পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিত করা, নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদ্যাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিনটি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করবে বিভিন্ন সংগঠন। নারী দিবস নিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরেছেন জাকারিয়া শাকিল ফকির
নারী মানে অন্নপূর্ণা নয় ;নয় শুধু লক্ষ্মী, সরস্বতী ; দিনের শুরুতে কিংবা শেষে আমরাই দুর্গা ,আমরাই কালী।আমরাই কিন্ত আদিশক্তি। সকলকে নারী দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। শুধু আজ নয়; বছরের ৩৬৫ দিন হোক নারী দিবস । নারীদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা প্রত্যেক মানুষের ধর্ম। নারীরা অল্প যত্ন পেয়েও সবার জীবনে সুখের জগত গড়ে তুলে।হাজার কষ্ট পেয়েও মুখে হাসি রেখে পরিবারের পথচলা সহজ করে। আমার জানামতে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী বিশ্বের মোট ১০০ কোটি মানুষের দুই-তৃতীয়াংশই নারী৷ যে বিশ্বের তিনজন নারীর প্রতি একজন এখনও নির্যাতন, শ্লীলতাহানী এবং বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে৷ আর বিশ্বের কোন কোন দেশে এই সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ,বিরোধী দলীয় মন্ত্রী ও নারী ,বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালক একজন নারী। দেশ চালানো,শিক্ষা,রাজনীতি, খেলাধুলা ,সাংবাদিকতা সবকিছুতেই নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। সবকিছুতে অবদান রাখতে গিয়ে সংসার সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে পিছিয়ে নেই আজকের নারীরা। ছোট থেকে আমার মামুনি, দিদা,জেঠি,ঠাকুমা সবাইকে দেখেছি সংসারের জন্য নিজের সবটুকু দিতে,সংসার চালানোর পাশাপাশি জেঠিকে অফিস ও সামলাতে দেখেছি। বড় হয়ে বিভাগের সিনিয়র আপুদের দেখেছি সংসারের পাশাপাশি সন্তানদের যত্ন নিয়েও বিভাগে ভালো ফলাফল করতে, ম্যামদের দেখেছি যত্ন নিয়ে আমাদের পড়াতে ,পাশাপাশি সংসারে সবকিছুতেই যোগদান করতে। যা দেখে আমার মতো আরো অন্য মেয়েরা সাহস পায় এগিয়ে যাওয়ার। আমিও তেমনি একজন নারী যার স্বপ্ন ইচ্ছে পূরণ করা। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার প্রবল ইচ্ছে যাতে নিজের দুই পরিবারের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, অনাথ শিশুদের, রাস্তায় থাকা কুকুরদের জন্য কিছু করতে পারি, পাশাপাশি সাংবাদিক হিসেবে দেশের জন্য কাজ করতে পারি।
কান্তা রায় তমা
শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ, নোবিপ্রবি
আমার দিনের শুরুটা হয় সূর্য উঠার আগেই, তড়িঘড়ি সকালের সকল কাজ সেরে ব্যাগে বইপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়া; সারাদিন এর ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট এর ধকল শেষে ছাত্র পড়ানো। ব্যাগ নিয়ে বাজারে দৌড়ানো, দরদাম করে জিনিস কেনা, মাসকাবারির হিসেব মেলানো, রান্না করা, দায়িত্ব পালনসহ বহু কাজ সামলাতে হয় একাই। এই সকল কাজে আমার একমাত্র অনুপ্রেরণা আমার মা। আমার চোখে তিনি একজন দশভুজা। মাতা, ভগ্নী, স্ত্রী রুপে প্রদীপ প্রজ্বলন, শিক্ষা,রাজনীতি,খেলাধুলা সর্বত্র বিচরণ। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নারীরা এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বাঁচে। প্রতিটা কন্যা, ভগ্নী, স্ত্রী, মাতা এক একজন যোদ্ধা। পুরুষশাসিত সমাজের চৌকাঠ পেরিয়ে নারীরা এখন দেশ শাসন করছে। শিক্ষা, খেলাধুলা, রাজনীতি, সমাজসেবা, অধিকার আদায়ে আর পিছিয়ে নেই আমরা। আমাদের অবাধ বিচরণ সর্বত্র। আমরা ভালবাসা দিয়ে যেমন মন জয় করি, তেমনি অন্যায়ে প্রতিবাদী হই দেবী দুর্গার ন্যায়। কারণ, আমরা মায়ের জাত।
সুপ্রিয়া রাণী দেবী
শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ, নোবিপ্রবি
নারী দিবস নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই আমার। একজন নারী প্রতিনিয়ত ঘরে-বাইরে যেভাবে সংগ্রাম করে যায় তার জন্য নারী দিবস প্রতিদিন। এখন সংবাদমাধ্যম, পত্রিকার পাতা খুললেই হাজার হাজার নারীর বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে সফল হওয়ার গল্প উঠে আসে। যেখান থেকে আরো অন্য মেয়েরা সাহস পায় এগিয়ে যাওয়ার।
আমিও তেমনি একজন নারী যার স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। হতে চাই একজন সফল ব্যাংকার তবে আরেকটি প্রবল ইচ্ছেও আছে সাথে একজন সফল আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। এই শিল্পের ক্ষেত্রে নারীদের অবদান রয়েছে ব্যাপক। এখন বাসায় থেকে সব ঘরোয়া কাজ সামলেও অনেক নারী এই পেশায় উদোক্তা হিসেবে রযেছেন এবং এর মাধ্যমে নিজের একটি পরিচয় তৈরি করারও সুযোগ পাচ্ছেন। নিজেদের ছোটোখাটো ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছেন। যার জন্য তাকে আলাদা করে কারো উপর নির্ভর করে থাকতে হয়না। পাশাপাশি তারা নিজেদের সংসারেও নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারছেন। আমি মনে করি এটাই একটা নারীর স্বাধীনতা। নিজের মতো সুন্দর করে বাঁচা। এ যুগে এসে আমি চাই সব নারীর নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করা উচিত যাতে নিজেকে কোন পরিস্থিতিতে ছোট মনে না হয়, অসহায় মনে না হয়। নিজেদের মতো করে সুন্দর, স্বাধীনভাবে বাঁচার উপায় যাতে নিজেরাই তৈরি করে নেয়। তবেই নারীদের সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। একজন নারীর অনুপ্রেরণা আরেকজন নারীই হতে পারে।
সামিয়া ইসলাম
শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ, নোবিপ্রবি
সংবাদ লাইভ/নোবিপ্রবি


