শাহিদুল ইসলাম: মানুষ সবসময়ই পুরনো জঞ্জাল কে ছুড়ে ফেলে নতুন কে গ্রহণ করতে চায়। আর সেই ধারণা থেকেই, নতুন বছরে নতুন করে নতুন ভাবে শুরু করার অভিপ্রায় থাকে অনেকেরই। শিক্ষার্থীদের মাঝেও এই আগ্রহ প্রবল। এর অবশ্য যৌক্তিক কারণও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সবসময়ই নিজেদের আরো সমৃদ্ধ করতে চায়৷সমৃদ্ধির এ পথে নিজেদের এগিয়ে এনে যেতে নতুন বছরে নতুন করে পরিকল্পনা সাজায় প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী।
আজ আমরা আলোচনা করব এমন নয়টি বিষয় সম্পর্কে যা একজন শিক্ষার্থীর নতুন বছরের পরিকল্পনায় থাকতে পারে-
দক্ষতা : একজন শিক্ষার্থীর সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো মানের দক্ষতা তাকে অনেক বেশি সামনে এগিয়ে রাখে। দক্ষতার মাঝে প্রথমে যে জিনিসটি আসে সেটি হচ্ছে কম্পিউটার ভিত্তিক দক্ষতা। মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট,মাইক্রোসফট এক্সেল, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এডোবি ফটোশপ,এডোবি ইলাস্ট্রেটরের মত সফটওয়্যারগুলোতে দক্ষতা একজন শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ায় তেমনি তার গ্রহণযোগ্যতা ও বাড়ায়। এছাড়াও উপস্থাপন দক্ষতা,যোগাযোগ দক্ষতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করতে নতুন বছরে নতুন করে পরিকল্পনা সাজানো যায়।
বই পড়া :বইয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।শিক্ষাজীবনের অন্যতম প্রধান উপকরণ বই।হাজার হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষিত আছে বইয়ে।শিক্ষার্থীরা অনেকেই বই পড়ার ব্যাপারে প্রবল আগ্রহী।কিন্তু সঠিক বই নির্বাচন ও সময়ের অভাবে বই পড়া আর হয়ে উঠে না। তাই বছরের প্রথমেই পরিকল্পনা করা যায় এ বছরে কোন কোন বই পড়া হবে এবং কতটুকু সময়ের মধ্যে বইগুলো পড়ে শেষ করতে হবে।
নতুন একটি ভাষা শিখা:মনের ভাব প্রকাশ বা যোগাযোগ রক্ষার অন্যতম একটি প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ভাষা।আর দিনকে দিন বিশ্ব পরিণত হচ্ছে একটি বিশ্বগ্রামে।তাই, পরিবর্তিত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অবশ্যই জানতে একটি বৈশ্বিক ভাষা।সেক্ষেত্রে প্রয়োগের ক্ষেত্র বিবেচনা করে ইংরেজি ভাষা থাকতে পারে সবার প্রথমে৷প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার আজকের এই দিনে ভাষা শিখা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল,ব্লগস,আ্যপস, বইসহ নানা উপকরনাদির সাহায্যে সহজেই একটি নতুন ভাষা শেখা যায়। তবে সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ধৈর্য ও একাগ্রতা অনেক বেশি প্রয়োজন। আর এজন্যই বছরের শুরুতেই আপনার পরিকল্পনায় সাজিয়ে রাখতে পারেন নতুন একটি ভাষা শিক্ষার জন্য বরাদৃত সময়ের।
ভোকেশনাল ট্রেনিং :ভোকেশনাল বা বাস্তবসম্মত শিক্ষা বর্তমানে খুবই সময়পুযোগী। নতুন শিক্ষা কারিকুলামে প্রয়োগিক ও কারিগরি শিক্ষাকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।বিভিন্ন প্রয়োগিক শিক্ষা যেমন রান্না করা, গাড়ি চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বাস্তবিক জ্ঞানের প্রশিক্ষণ নেওয়া যায় নতুন বছরে ।এসব বাস্তবিক জ্ঞান শিক্ষার জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়, অনেক বেশি সময় নষ্ট হয়, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। ইউটিউবের সাহায্য এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এসব জিনিস খুব সহজেই রপ্ত করা যায়।
শরীরচর্চা:কথায় আছে “স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল”।অসুস্থ হলেই এ কথাটির মর্মার্থ আমরা বুঝতে পারি। সুস্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি কিন্তু স্বাস্থ্য সুস্থ ও সবল রাখতে আমাদের সদিচ্ছার যথেষ্ট ঘাটতিও পরিলক্ষিত হয়। তুলনামূলক কম বয়সে আমাদের অনেকেরই পেটে মেদ জমে গেছে।অল্প একটু পরিশ্রমই অনেক বেশি শান্ত হয়ে পড়ছি আমরা। অল্প বয়সে বুড়িয়ে গেছে অনেক তরুণ, এই বাস্তবতায় শরীর চর্চা হওয়া উচিত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ। শরীরচর্চায় একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়ায় শুরু করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘ সময় ধরে উদ্দীপনা জাগিয়ে রাখাটাও আরও গুরুত্বপূর্ণ।তাই নতুন বছরে শরীর ফিট রাখার পরিকল্পনা থাকবে সবার উপরে৷
নেটওয়ার্কিং কিংবা যোগাযোগ :মানুষ সামাজিক জীব,মানুষকে একে অপরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়, যোগাযোগ করতে হয় প্রতিটি সময়।আমরা অনেকেই অন্য অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হতে কোন্ঠা বোধ করি,অন্যদের থেকে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখি।কিন্তু এতে করে মত নিজের পায়েই কুড়াল মারা হয়। আপনি যত বেশি মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারবেন আপনার জানার সুযোগ ততই বাড়বে।সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দনীয় পেশা সমূহের অভিজ্ঞ সিনিয়রদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে এবং অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা কে নিজের আত্মউন্নয়নের জন্য কাজে লাগাতে পারে।
লেখালেখি বা প্রকাশনা: ছাত্র জীবনে আমরা অনেক বিষয়ে বিস্তর আলোচনা ও পড়াশোনা করে থাকি। কিন্তু এ পড়াশোনা শুধুই একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করার জন্য।আমরা কি কখনো যে বিষয়টি পড়লাম ওই বিষয়টিকে নিয়ে চিন্তা করেছি! বাস্তব জীবনে বিষয়টির প্রয়োগ নিয়ে ভেবেছি! এর উত্তর হ্যা বা না দুটিই হয়।যদি উত্তর “না” হয় তবে লেখালেখি করা এবং তা প্রকাশ করার ইচ্ছা বিষয়গুলোর কে নিয়ে আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে। এছাড়াও লেখালেখি শুধু জ্ঞান অর্জন নয় জ্ঞান চর্চা করতেও সাহায্য করে।একজন লেখকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, তিনি তার লেখার মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করেন ।তাই, নতুন বছরের শুরুতে আপনি টুকে নিতে পারেন সামনের দিনগুলোতে আপনি কোন কোন শিরোনামে লিখবেন? কখন লিখবেন? কোথায় প্রকাশ করবেন? ইত্যাদি ।
স্বেচ্ছাসেবা বা সামাজিক কার্যক্রম :গানের কথায় আছে “মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে।” মানবিকতা চর্চা ও মনুষত্বের লালন মানুষকে পৃথিবীতে স্বর্গ সুখ অনুভব করায়। নতুন বছরে আপনি সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি মানবিকতার অগ্রযাত্রায় নিজেকে অংশীদার করে রাখতে পারেন।রক্ত দান কর্মসূচি, গাছ লাগানো কর্মসূচি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও মাদকবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধিকরন সহ নানা প্রকার সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ভরপুর হয়ে উঠতে পারে আপনার নতুন বছরের পরিকল্পনার খসরা৷
একাডেমিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা :শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম কাজ হচ্ছে একাডেমিক পড়াশোনা। যদিও একাডেমিক পড়াশোনা শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক যন্ত্রণাদায়ক মনে হয় তারপরও এটিকে পাশ কাটানোর কিংবা ছেঁটে ফেলার কোন সুযোগ নেই।একটি প্রবাদ আছে “নাচতে নেমে, ঘোমটা দিয়ে লাভ নেই।” ঠিক তেমনিভাবে যেহেতু আমাদের পড়াশোনা করতেই হবে সেহেতু অল্পএকটু করে লাভ নেই।তাই নতুন বছরের শুরুতেই; কোন দিন, কোন বিষয়টি, কতটুকু সময়ে শেষ করা হবে ইত্যাদি বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি পরিকল্পনা সাজানো যায়।এক্ষেত্রে অবশ্যই আবেগতাড়িত হয়ে অসম্ভব ও কল্পনাতীত পরিকল্পনা পরিহার করতে হবে। বাস্তবতার আলোকে যুক্তিক ও গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা হতে পারে একাডেমিক পড়াশুনার অগ্রযাত্রার একটি সহায়ক।
লেখা: শিক্ষার্থী, একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


