ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম: ডিম একটি পুষ্টিকর খাদ্য। ডিমে ভিটামিন সি বাদে অন্য সব ভিটামিন রয়েছে। নানা গবেষণায় ডিম পুষ্টিকর প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও এই ডিম নিয়ে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। তেমনি একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে ফার্মের ডিম নিয়ে।
অনেকেই মনে করেন, ফার্মের ডিম খেলে দেহের ক্ষতি হবে। দেশি ডিমই তাঁদের পছন্দ। কিন্তু বাস্তবে ঘটনাটি একেবারেই উল্টো। ফার্মে হাঁস-মুরগির বিজ্ঞানসম্মত রক্ষণাবেক্ষণ হয় বলে এদের ডিমের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এদের কুসুমের রং ফ্যাকাসে। কারণ, ফার্মের হাঁস-মুরগিকে সরাসরি ভিটামিন এ খাওয়ানো হয়। অন্যদিকে দেশি মুরগিরা যেসব শস্যদানা ও শাকসবজি খুঁটে খায়, তা থেকে ভিটামিন এ’র প্রাক অবস্থা, অর্থাৎ ক্যারোটিন তারা পায়। এই ক্যারোটিন টকটকে লালাভ হলুদ রঙের। এই ক্যারোটিন লিভারে গিয়ে ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়।
কিন্তু অধিকাংশ লোকই কুসুমের লালাভ হলুদ রং দেখেই দেশি ডিম পছন্দ করেন এবং পুষ্টিকর মনে করেন। প্রকৃতপক্ষে দেশি ডিম ততটা পুষ্টিকর নয়। দেশি ডিমের চেয়ে ফার্মের ডিমই বেশি পুষ্টিকর। হতে পারে দেশি ডিম খেতে সুস্বাদু। ফার্মের ডিম ফ্যাকাসে রঙের বলে ভালো নয় আর দেশি ডিম বেশি ভালো—এ ধারণা পুরোপুরি ভুল।
তবে সময়ের সাথে সাথে এ ভুল ধারণা থেকে মানুষ বেরিয়ে আসছে। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা এটা মানতে নারাজ যে দেশী মুরগীর ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি। এর কারণ ছোট থেকে তারা ফার্মের ডিম খেয়েই অভ্যস্ত। তবে অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের কাছে এখনো দেশী ডিম প্রিয়, এ প্রিয় হওয়ার কারণ এর স্বাদ তার কাছে ভালো লাগে। তার স্বাদ একান্তই তার। দেশী ডিম খেতেই সে অভ্যস্ত এ কারণে তার কাছে ভালো মনে হতেই পারে। কিন্তু এ ভালো লাগা মানে এই না যে দেশী মুরগীর ডিম ভালো, ফার্মের তথা বাণিজ্যিক ডিম খারাপ।
এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত, দেশি মুরগির ডিম ও ফার্মের মুরগির ডিমের মধ্যে পুষ্টিমাণের মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। ডিমের ওজন বিবেচনায় ফার্মের মুরগির ডিমের ওজন, দেশি মুরগির ডিমের ওজনের প্রায় দ্বিগুণ। আর এ কারণে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান দেশি মুরগির ডিমের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বিদ্যমান থাকে ফার্মের তথা বাণিজ্যিক মুরগির ডিমে।
লেখক: প্রফেসর, পশুপুষ্টি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।


