ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম : ব্রয়লার মুরগীতে মাংসের পরিমান বেশী থাকে, যার ফলে ভোক্তাগণ বেশী পুষ্টি পেয়ে থাকে। এই কারণে ব্রয়লার মুরগী দিন দিন ভোক্তাদের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা বাড়ছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ প্রিয় ব্রয়লার মুরগী। কিন্তু অপেক্ষাকৃত বয়স্ক লোকদের কাছে, কম জানা, অভ্যাসগত কিংবা অজ্ঞাত কিছু কারণে এখনো প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।
দেশী মুরগী ৪ মাসে প্রায় ১ কেজি পরিমাণ হয়ে থাকে এসময় এ মুরগীকে ৪ কেজির বেশি খাবার খাওয়াতে হয়। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগী ১ মাসে প্রায় ২ কেজি মতো ওজন দেয়, এসময় সে মাত্র ৩ কেজি খাবার খেয়ে থাকে। কম সময়ে, কম খাবার দিয়ে দ্রুত বর্ধনশীল আমিষ পাওয়া যাচ্ছে এটাই কিন্তু বিজ্ঞানের সাফল্য। বাণিজ্যিক ভাবে লালন পালন, বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে উৎপাদন হয় বলে, এটি যে কোন জায়গায়, তুলনামূলক কম দামে আমরা পেয়ে থাকি।
দেশী মুরগীর উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সুষম খাদ্য ব্যবহার করা হয় না। মুরগীগুলো অবাধ বিচরণ করে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করে, এবং একটি দীর্ঘ সময় পর (প্রায় ৪-৫ মাস) দেহে মাংস তৈরি হয়। অন্যদিকে ফার্মের মুরগী বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন ও সুষম খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে রোগ জীবাণু থেকে মুক্ত রেখে অতি অল্প সময়ে দেশী মুরগীর চেয়ে ৪/৫ গুন বেশী মাংস পাওয়া যায়।
এটাই সত্য, ব্রয়লারের কারণেই সারা পৃথিবীতেই মানুষ অনেক বেশি আমিষ পাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশী মুরগীর ও ব্রয়লার মুরগীর মধ্যে স্বাদে কিংবা পুষ্টিমানে কোনটি সেরা? আসলে এ ধরণের তুলনা/প্রার্থক্য করা উচিত নয়। এর কারণ আপনি যে মুরগীই খান না কেন? আমরা কিন্তু আমিষের জন্যই মুরগী খেয়ে থাকি, সেটা ব্রয়লার, দেশী কিংবা অন্য যে কোন জাতের হউক না কেন। আমিষ আসলে আমিষই, এটি যে সোর্স থেকেই আসুক না কেন।
দেশী মুরগী যদি কম বয়সের (১ মাসের) খাওয়া হয় এটিও ব্রয়লারের মতোই স্বাদের মনে হবে। স্বাদ মূলত নির্ভর করে কোন মাংসে কি পরিমাণ ফ্যাট বা চর্বি রয়েছে। বয়স যত বাড়তে থাকে, সে মুরগীতে তত বেশি ফ্যাট জমা হতে থাকে। যত কম বয়স তত কম ফ্যাট জমা হয়। ফ্যাট থাকলে কিছুটা স্বাদ বেশি হয়, আর এই একমাত্র কারণেই অনেকে আমরা দেশী মুরগীকে বেশি স্বাদের বলে থাকি। কিন্তু এই ফ্যাট কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। কেবল এটার জন্য কেউ যদি ব্রয়লার মুরগীকে কম স্বাদের মনে করেন, সে কিন্তু ভুল করলেন। কারণ মুরগী আমরা খেয়ে থাকি ফ্যাটের (চর্বির) জন্য নয় বরং আমিষ তথা প্রোটিনের জন্য। মূলত কেউ যদি ১০০ গ্রাম দেশী মুরগীর মাংস খান কিংবা ১০০ গ্রাম ব্রয়লারের মুরগী খান সেক্ষেত্রে পুষ্টিমানের কোনই পার্থক্য হয় না।
জনবহুল এই দেশে প্রায় ১৬ কোটি লোকের আমিষের চাহিদা দেশী মুরগীর মাধ্যমে কিছুতেই পুরণ করা সম্ভব নয়। তাই শিল্পপতিদের দায়িত্ব নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত চিকেন উৎপাদন করে দেশের সামগ্রিক আমিষের চাহিদা পূরণে সার্বিক ভাবে চেষ্টা করা। বিভিন্ন জরীপেও দেখা যায় দেশী মুরগীর ক্রেতাগণ ব্রয়ারের মুরগীর স্বাদ ও গুণের তুলনা করে প্রায় একই রকম পায়, বিধায় ব্রয়লার মুরগীর গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
লেখক: প্রফেসর, পশুপুষ্টি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।


