ঢাকারবিবার , ১ জুন ২০২৫
  1. কৃষি ও পরিবেশ
  2. খেলা
  3. জাতীয়
  4. ধর্ম
  5. বিনোদন
  6. বিশ্ব
  7. ভ্রমণ
  8. মতামত
  9. রাজনীতি
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সাক্ষাৎকার
  12. সারাদেশ
  13. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ খবর

দুধ হোক আমাদের শক্তির উৎস ও পুষ্টির নিরাপদ আশ্রয়

মতামত বিভাগ
জুন ১, ২০২৫ ২:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ড. মোঃ রাকিবুল হাসান১, ইশতিয়াক আহম্মদ পিহান১, সোনিয়া সুলতানা১, আয়েশা সিদ্দীকা আফসানা১, আনোয়ার হোসেন১, ড. শাকিলা ফারুক২:  দুধ অপরিহার্য পুষ্টি গুণে ভরপুর হওয়ায় পৃথিবীতে ৭০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুধের ব্যবহার হয়ে আসছে। গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া এই চার ধরনের প্রাণী আমাদের দেশে দুধালো জাতের প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক দুধের প্রাপ্যতা ২৩৪.৪৫ মিলি লিটার। বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ দুগ্ধ খামার রয়েছে এবং ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ডেইরি সেক্টরের সাথে জড়িত। কৃত্রিম প্রজনন ও জাত উন্নয়নের ফলে দেশে দুধ উৎপাদন বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৫০.৪৪ লাখ মেট্টিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থির মূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১.৮০ যা টাকার অংকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ক্রমান্বয়ে কমলেও কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ১৬.৩৩ ভাগ এবং দুধ উৎপাদন প্রায় ৪.৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক কমপক্ষে ২৫০ মিলি লিটার দুধ পান করা উচিৎ। তবে বয়স ভিত্তিতে এর মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। প্রতি ১০০ মিলি লিটার দুধে রয়েছে প্রায় ৮৮.১৩ মিলি লিটার পানি, ৬০ কিলো ক্যালরি শক্তি, ৩.২৮ গ্রাম প্রোটিন, ৪.৬৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩.২ গ্রাম চর্বি জাতীয় পদার্থ, ৪.৮১ গ্রাম চিনি, ০.০১২ গ্রাম কোলেস্টেরল, ০.৪৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ এবং কিছু পরিমান ভিটামিন। তাই দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে দুধের শক্তিশালী ভ‚মিকা প্রমাণিত। এছাড়াও, হাড়ের গঠন মজবুত করতে দুধের ভ‚মিকা অনবদ্য। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

দুধ পান নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে যার অধিকাংশই ভিত্তিহীন।
☞ ছোটবেলা থেকেই দুধ নিয়ে আমরা যে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাটি শুনে এসেছি তা হলো আনারস খাওয়ার পর দুধ পান করলে মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন কথাটির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে আনারসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকায় আনারস খেলে অনেকের এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স হওয়ায় দুধ পানে অনেকের পেট খারাপ বা বদ হজম হতে পারে, তবে আনারস খাওয়ার সাথে এর সরাসরি সম্পর্ক নেই।
☞ অনেকেই মনে করেন দুধ খাওয়ার ফলে শরীরে কফ তৈরি হয় বা ঠান্ডা/সর্দি বেড়ে যায়। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ঠান্ডা জনিত অসুস্থতার সাথে দুধের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। বরং দুধ শরীরকে পুষ্টি জোগায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
☞ অনেকে ধারণা করেন যে, কাঁচা দুধে বেশি পুষ্টিগুণ থাকে। তবে বাস্তবতা হলো কাঁচা দুধে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া (যেমন সালমোনেলা, ই-কোলাই, ব্রুসেলা) থাকতে পারে যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। তাই, সঠিকভাবে না ফুটিয়ে কাঁচা দুধ পান করা বিপদজনক।
☞ দুধ ও মাংস একসঙ্গে খাওয়া যাবে না, এতে চর্মরোগ হয়, এটি একটি বহু পুরনো ভ্রান্ত বিশ্বাস। দুধ ও মাংস একসঙ্গে খেলে চর্মরোগ হয় এমন কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। দুটো খাবারই পুষ্টিকর এবং শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণে কার্যকরী ভ‚মিকা পালন করে।
☞ দুধ খেলে ওজন বাড়ে, তাই তা এড়িয়ে চলা উচিত, অনেকে এমন ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু, পরিমাণমতো এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় খেলে দুধ শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায় এবং তা ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হতে পারে।
☞ অনেকেই মনে করেন দুধে ফ্যাট মানেই এটি শরীরের জন্য খারাপ। তবে, দুধে থাকা চর্বি (বিশেষ করে গাভীর দুধে থাকা শর্ট চেইন স্যাচুরেটেড ফ্যাট) পরিমাণমতো গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য অধিক উপকারী। তবে যাদের হৃদরোগ বা কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে লো-ফ্যাট বা স্কিমড দুধ পান করা উত্তম।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে দুধ পানের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকাল ও রাত। সকালে নাস্তার পর দুধপান করলে শরীরের মেটাবলিজম সক্রিয় হয় এবং ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেশি থাকার ফলে দুধের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সহজে শোষিত হয়, ফলে শরীরে শক্তি জোগায় ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, রাতে ঘুমের আগে দুধপান শরীরকে শিথিল এবং গভীর ঘুমে সহায়তা করে, কারণ দুধে থাকা ট্রিপটোফ্যান ও কেসিন প্রোটিন ধীরে হজম হয়ে সারারাত পেশি মেরামতে সহায়তা করে।

অনেকের ক্ষুদ্রান্ত্রে¿ ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এনজাইমের ঘাটতির কারণে দুধে থাকা ল্যাকটোজ সঠিকভাবে হজম হয় না। ফলে অবিভাজিত ল্যাকটোজ বৃহদন্ত্রে গিয়ে ব্যাকটেরিয়ার গাঁজন প্রক্রিয়ায় গ্যাস, পেটফাঁপা, ডায়রিয়া ও অস্বস্তির সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে শরীরে ল্যাকটেজ এনজাইম উৎপাদন কমে যাওয়ায় দুধ ভালোভাবে হজম হয়না। কিন্তু, ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়িয়ে দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে অনেক ক্ষেত্রেই এটি সহনশীল হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও, খালি পেটে না খেয়ে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দুধ খেলে লক্ষণগুলো অনেকাংশেই কমে যায়। এছাড়াও উত্তম সমাধান হিসেবে দুগ্ধপণ্য (দই, ছানা, পুডিং, কাস্টার্ড, বা চিজ) তৈরী করে খেলে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটোজকে ভেঙে ফেলে, ফলে তা সহজে হজম হয়। এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারা দুধ খেতে চায় না। তাই তাদেরকে দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দুগ্ধপণ্য যেমন মিল্কশেক, ফ্লেভার্ড মিল্ক, চিজ, পুডিং, আইসস্ক্রিম, লাচ্ছি, লাবাং ইত্যাদি রূপে আরো আকর্ষণীয় করে সরবরাহ করা যেতে পারে। শিশুরা সাধারণত অনুকরণ প্রিয়। তাই বাবা-মা নিজেরা দুধ খেলে শিশুরাও দুধপানে আগ্রহী হয়ে উঠবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কালচারাল প্রোগ্রাম ও স্পেশাল ইভেন্ট আয়োজন করে দুধের উপকারিতা সম্পর্কে ছোট বাচ্চাদের সামনে বারবার তুলে ধরতে হবে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে হাট-বাজার, স্টেশন, রেস্তোরাঁ, পার্ক ও ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের সহজলভ্যতা ও জনপ্রিয়তা চোখে পড়ে। এসব স্পটে মিল্কশেক, দই, চিজ, আইসক্রিম, ইয়োগার্ড, লাবান, লাচ্ছি মতো স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলো সহজেই পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এসব জনবহুল এলাকায় সাধারণত চিপস, চানাচুর, ঝালমুড়ি, তেলে ভাজা প্রক্রিয়াজাত খাবার ও সফট ড্রিংকের প্রাধান্য বেশি। ফলে মানুষ অপুষ্টিকর খাবারের দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়। অথচ এসব খাবার তৈরিতে যে অর্থ, সময় ও জ্বালানি ব্যয় হয়, তার বিকল্প হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণের অভ্যাস গঠন ও কালচার তৈরী করলে তা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ, সুস্বাদু ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। দুগ্ধজাত পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হলে এর পুষ্টিগুণ নিয়ে আরো বেশি প্রচার প্রচারনার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারন, বাজারমূল্য, সহজলভ্য ও পুষ্টিগুন বিবেচনায় দুধ হতে পারে দেশের প্রতিটি মানুষের সুস্থতা ও মেধা গঠনের নির্ভরযোগ্য অনুসঙ্গ।
বর্তমানে দুগ্ধশিল্প বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি খাত। তবে এ খাতটির রয়েছে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অধিক উৎপাদনশীল জাতের গরুর অভাব, খামারিদের উন্নত খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণের অভাব, ডেইরি রেশন নিয়ে খামারিদের আগ্রহ ও সচেতনতার অভাব, মানসম্মত গোচারণ জমির স্বল্পতা, গো-খাদ্যের উচ্চ মূল্য, খামারিদের ফডার উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে (সাইলেজ, হে, টিএমআর) আগ্রহ কম থাকা, বিভিন্ন সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব, দুগ্ধখামারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা না থাকা, ডেইরি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে আলাদা বিদ্যুৎ বিলের বিশেষ সুবিধা না থাকা, জলবাযু ও পরিবেশের বিরূপ প্রভাব, দুধ শীতলীকরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাব, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান নির্ণয় ও নিয়মিত তদারকির অভাব, দুধে এন্টিবায়োটিক ও ভারি ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে গুজব, বিদেশ থেকে গুঁড়া দুধের আমদানি নিয়ন্ত্রন ও সঠিক বিপণন ব্যবস্থার অভাব, উৎপাদন খরচের সাথে বাজার ম‚ল্যের অসংগতি, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে উচ্চতর গবেষণা ও বিশেষায়িত গবেষণাগারের অভাব এবং দুগ্ধ খামারিদের ডেটাবেজ না থাকা এ সেক্টরের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত। বিগত সময়ে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও তুলনামূলকভাবে দুধে দাম সে অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়নি। দেশে বিদ্যমান কোম্পানীগুলো সাধারণত দুধে চর্বির পরিমানের ভিত্তিতে দুধের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। দুধে চর্বির পরিমান যেহেতু খুব পরিবর্তন হয় না, তাই খামারিরা দুধের মূল্য বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেনা।


সাম্প্রতিক সময়ে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কৃত্রিম প্রজনন, জাত উন্নয়ন, সংকরায়ন ও উন্নত জাতের ঘাস চাষসহ নানা উদ্যোগ ও গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সংকর জাতের গাভী দৈনিক গড়ে ৬-১০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। বর্তমানে, দেশে প্রায় ৫৮,৫৯০টি ডেইরি ফার্ম রয়েছে, যেখানে লক্ষাধিক খামারি সরাসরি দুগ্ধ উৎপাদনে যুক্ত থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছেন। তবে এখনও খামারিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। মধ্যস্বত্বভোগীরা কম দামে দুধ কিনে বেশি দামে বিক্রি করে, ফলে উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে বিশাল দামের ফারাক তৈরি হয়। এ ব্যবধান কমাতে এবং দুধের বাজারকে টেকসই করতে তরল দুধের পাশাপাশি নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত পণ্য বাজারজাত করতে হবে।

ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবেও দুধ উৎপাদনে ওঠানামা দেখা যায়। সাধারণত ফাল্গুন থেকে আষাঢ় (ফেব্রুয়ারি-জুন) মাসে উৎপাদন বেশি হয় ও দাম কম থাকে। এই সময় সরাসরি দুধ বিক্রির বদলে দই, ছানা, ঘি বা মিষ্টির মতো পণ্যে রূপান্তর করে খামারিরা অধিক লাভবান হতে পারেন।
তদুপরি, উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন উৎপাদন ও সংরক্ষণ, প্রয়োজনে আমদানি ও সংকর জাতের গাভী উৎপাদনের মাধ্যমে দুধের পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে খামারিদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যথাযথ ও বিজ্ঞান ভিত্তিক খামার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এলক্ষ্যে বিভিন্ন দেশীয় প্রযুক্তির সহায়তায় রেশন ফর্মুলেশন, উন্নত জাতের ঘাস উৎপাদন, সাইলেজ ও হে তৈরি, বাণিজ্যিক গো-খাদ্যের কাঁচামাল উৎপাদনে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য আমদানিতে ভ্যাট হ্রাসকরণসহ সুলভমূল্যে প্রযুক্তি সহায়তা দিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর আওতায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, উক্ত খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এলডিডিপি) এবং ডেইরির মান উন্নয়ন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও বহুমুখী দুগ্ধপণ্য তৈরির জন্য বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর আওতায় ডেইরি রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি নতুন সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এছাড়াও, ডেইরি খাতকে টেকসই করতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, গাভী বীমা, আলাদা বিদ্যুৎ বিল কাঠামো, দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্র, ল্যাবরেটরিতে ভেজাল শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, গুড়া দুধ আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং দেশীয় গুড়া দুধ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আশার কথা যে, বর্তমানে খামারীদের জন্য প্রাণিসম্পদ ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে খামারীরা উপকৃত হবেন বলে আশা করা যায়। সবশেষে, দেশের সব ডেইরি খামারিদের একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি ও গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে খামারি ও ভোক্তা উভয়ের লাভ নিশ্চিত করা সম্ভব।

এভাবেই বিকশিত হতে পারে দেশের ডেইরি শিল্প।বেকারত্ব দূরীকরণ ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের অংশ গ্রহণে দুগ্ধশিল্প একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হয়েছে। উন্নত দুগ্ধ উৎপাদনকারী জাত, গো-খাদ্যের সহনীয় মূল্য নির্ধারণ, যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও রোগ নিরাময়সহ স্বল্প মূল্যে সুষম খাদ্যের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি, স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থাপনা, গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করণের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলমান শ্বেতবিপ্লবের কার্যক্রমকে আরো বেগবান করা সম্ভব। এছাড়া দেশে দুগ্ধ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে জাতীয় দুগ্ধনীতির বাস্তবায়ন এবং জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।

লেখক: ডেইরি রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার১, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার, ঢাকা-১৩৪১।
মহাপরিচালক২, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার, ঢাকা-১৩৪১।

সংবাদ লাইভ/মতামত

www.sangbadlive24.com এ প্রকাশিত সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও সবকিছুই আমাদের নিজস্ব। বিনা অনুমতিতে এই নিউজ পোর্টালের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। যে কোন বিষয়ে নিউজ/ফিচার/ছবি/ভিডিও পাঠান news.sangbadlive24@gmail.com এই ইমেইলে।