ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে সংলাপের বিষয়টি প্রস্তাবে অনুপস্থিত থাকায় জাতিসংঘে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ। যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন বলেও জানানো হয়।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন।
নিবিড় কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং সংঘাতে লিপ্ত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব পয়েন্ট না থাকায়, শুধু ইউক্রেনে শান্তির ওপর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) সাম্প্রতিক অধিবেশনে আনীত একটি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে বাংলাদেশ, বলেন তিনি।
মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র বলেন, যেহেতু এ প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য ইউক্রেনে একটি সমন্বিত, যথাযথ ও টেকসই শান্তির উপায় খোঁজা, সেহেতু আমরা বিশ্বাস করি যে, চলমান এ সংঘাতের যে কোনো অর্থবহ ও টেকসই সমাধানের জন্য নিবিড় কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং এ সংঘাতে লিপ্ত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ অবশ্যই জরুরি।
আমাদের মতে, ‘প্রস্তাবটিতে এ গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব পয়েন্টই না থাকায়, আমরা ভোটদানে বিরত থেকেছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ মিডিয়া ব্রিফিংকালে কোনো প্রশ্ন না নিয়েই, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ওই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকার যুক্তি তুলে ধরেন সাবরিন।
বাংলাদেশ ইউক্রেন পরিস্থিতি বিশেষত সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বেসামরিক প্রাণহানি, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি এবং এ যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাবের ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
আমরা বৈরিতার অবসান এবং আমাদের অঙ্গীকারে অটল থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে সেহেলী বলেন, যা জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং যে কোনো মূল্যে একে সমুন্নত রাখতে হবে। ঢাকা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা প্রত্যেকের জন্য, সর্বস্থানে ও সর্বাবস্থায় ব্যতিক্রমহীন এবং সর্বজনীনভাবে গ্রহণীয় হতে হবে।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি – ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে সাবরিন বলেন, বাংলাদেশের একটি শান্তিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে; যা জাতিসংঘের নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে সবার সার্বভৌমত্বের ওপর সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল এবং সব রাষ্ট্রের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার জাহাজ উরসা মেজরকে গত ডিসেম্বরে বন্দরে ভিড়তে দেয়নি বাংলাদেশ। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে প্রায় ২ মাস পর গত মঙ্গলবার মস্কোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়। যদিও দুই দেশই জানায়, এতে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। এর দুদিন পর বৃহস্পতিবার যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোটাভুটি হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং রাশিয়াকে প্রত্যাহারের প্রস্তাবে ১৪১টি দেশ সমর্থন দিলেও ভোটদান থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও পাকিস্তানসহ ৩২ দেশ।
ভোটদানে বিরত থাকায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায় রাশিয়া। ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাসের এক টুইটবার্তায় আরও জানানো হয়, রাশিয়াবিরোধী প্রস্তাব ইউক্রেনের সংঘাত বন্ধ করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ প্রস্তাবের পক্ষে ১৪১টি সদস্যরাষ্ট্র, বিপক্ষে ৭টি রাষ্ট্র ভোট দেয় এবং ৩২টি রাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকে। বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া, মালি, নিকারাগুয়া, রাশিয়া ও সিরিয়া এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।


