অনুপ্রিয়া
তোমাকেই লিখছি, এই পৌষের বিকেলে । তোমার মনে আছে নিশ্চই, তুমি আমাকে বলেছিলে -“আমিও তোমার মতো সাইকেলে ঘুরে বেড়াবো এই শহর, দু’জনে দূরের কোন গ্রামে। দাপুনিয়া পাড় হয়ে, আরো দূরে গিয়ে খোলা মাঠের কিনারে বসবো। বরাবরের মতো চিনি ছাড়া একটা আদা চা দুজনে ভাগাভাগি করে শেষ করবো।
আরও বলে ছিলে- খুব সহজে শিখিয়ে যেন দেই সাইকেল চালানো।
অনুপ্রিয়া, আমার বারবার তোমার ইচ্ছার কাছে হার মনতে হয়েছে। সে বারও তাই। তুমি টাকা ধার করে সাইকেল কিনে নিলে আমাকে সাথে করে। পরদিন থেকেই শেখাতে শুরু করলাম। হঠাৎ পড়ে গিয়ে তুমি বেশ ব্যথাও পেয়েছিলে হাঁটুর একটু উপড়ে। সেদিন প্রথম দেখেছিলাম নারীর সুন্দর দেহে আঘাত লাগলে কেমন রক্তজবার মতো ক্ষত হয়ে যায়। তারপরও তুমি চেষ্টা ছাড়নি। এক অদম্য চেষ্টায়, সাইকেল শিখেই নিলে।
অতঃপর কোন একদিন তোমার সাইকেলটি আমাকে দিয়ে বললে – এই লাও সাইকেল, আমার প্রিয় সাইকেলটি এখন থেকে তুমিই চালাবে। আবার কোন একদিন তোমার থেকে চেয়ে নেবো। সেই দিন থেকে সাইকেলটি ফেরত দেবার প্রতিক্ষায় থেকে থেকে সাইকেলটি আমার থেকে চুড়ি হয়ে যায়। এই কথাটি শোনার পড় তোমার ভেতর বাহির কষ্টে আচ্ছন্ন হয়ে যায়, তবুও তুমি বুঝতে দাও নি সেই কষ্ট আমাকে।
অনুপ্রিয়া, তোমার সেই ক্ষতটা এখন কেমন আছে? সাইকেল হারানোর কষ্ট কি তোমাকে এখনো আচ্ছন্ন করে তুলে ? তুমিই তো বলেছ-
আমাকে আগলে রাখার দায়িত্ব তোমার। ছেড়ে দেওয়ার ক্ষমতাও তোমার। তুমি যেমন চাইবে এমনি হবে। যে ধরে রাখতে পারে না, সেই ব্যর্থ।
এই পৃথিবীর মানুষ পড়া শেষ হয় না কখনো কারো। আমিও কখনো পড়তে পারি নি তোমাকে। এখানে কেউ চলে যায় বা কেউ ছেড় দেয়। এই সামান্য সময়ে একটা অদ্ভুত মায়ার আবরণে সমস্তটাই ডেকে থাকে কেবল। আমাদেরও তাই হয়েছে।
অনুপ্রিয়া, তোমার হারানো সাইকেল আমি খুঁজে পাইনি কখনো। খুঁজতে খুঁজতে কখন যে তোমাকেও হারিয়ে ফেলেছি তাও বুঝিনি। আমি আসলে এমনি হয়তো! জীবনে কিছুই ধরে রাখতে পারি না। এখনো যে খুঁজি চলি তোমায়…
অনুপ্রিয়া, তোমার জন্য সাইকেল কিনেছি। সেই তোমার পছন্দের কালার। পছন্দের সিট। তুমি না বলতে-সাইকেলের সিটটা একটু নিচু করে দিতে তাও দিয়েছি। সিটের উপড়ে একটা কভারও লাগিয়েছি। এখন শুধু তোমাকে পৌঁছাতে হবে। কোথায় পৌঁছালে তুমি পাবে, পত্র দিও? পত্র দিও দুঃখ কিনে আমার নামে। আমার নামে পত্র দিও।দিও পত্র আমার নামে।
ইতি
তোমার দুঃখ


