আবুল বাশার মিরাজ: একটা কথা প্রায়ই শুনি, সেটা হচ্ছে কবিদের মৃত্যু হয়না। এ কথাটি আর কোন কবির জন্য সত্য হউক বা না হউক তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষেত্রে শতভাগ সত্য। লেখার মাধ্যমে বেঁচে আছেন ও থাকবেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরু জীবিত না থাকলেও তাঁর স্মৃতি হিসেবে এখনও সমাদৃত শিলাইদহের কুঠিবাড়ি। আর এ কারণেই হয়ত বাংলা সাহিত্যের এই কিংবদন্তীর স্মৃতি দেখতে শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে প্রতিনিয়তই ভিড় জমে আমাদের মত শত শত রবীন্দ্রপ্রেমীদের। মূলত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম শিলাইদহ। গ্রামটির পূর্ব নাম ছিল কসবা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর যৌবনকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় এখানে কাটিয়েছেন। শিলাইদহ কুঠীবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। কুমারখালীর শিলাইদহ সারাবিশ্বে পরিচিত পাবার কারণ যে কবিগুরু তা এখানে না আসলে আমারও বিশ্বাসই হত না যে কবিগুরু আর কুমারখালীর শিলাইদহ স্মৃতির আবহে মিলেমিশে একাকার।
বাংলাদেশে যেসব জায়গা কবিগুরুর পায়ের ধুলোয় ধন্য হয়েছে, তার প্রধানতম স্থান হলো কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ কুঠিবাড়ী। জমিদারির দায়িত্ব নেওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ স্থায়ীভাবে শিলাইদহে থেকেছেন। কুমারখালীর বিশেষত্ব হচ্ছে ছায়া শুশীতল আর নিরিবিলি পরিবেশ। এ কারণেই হয়ত সাহিত্য চর্চার জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বারবার ফিরে আসতেন এই কুঠিবাড়িতে। এখানে বসেই জমিদারী পরিচালনাসহ সাহিত্যচর্চা করতেন তিনি। আর এ কারণেই পদ্মাতীরের এই ছায়াশীতল কুঠীবাড়ি আজও স্মৃতি বয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
ঘুরে দেখে ও বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারলাম, ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে জমিদারি দেখাশোনার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহের এই কুঠিবাড়ি থেকেই ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারি পরিচালনা করেন। প্রায় ৩৩ বিঘা জমি নিয়ে কুঠিবাড়ির তিন তলাবিশিষ্ট এ বাড়িতে রয়েছে ১৭টি কক্ষ। কক্ষ ও বারান্দাজুড়ে প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে কবির ব্যবহৃত একটি পালঙ্ক, লেখার টেবিল, ইজিচেয়ার, নদীতে চলাচলের দু’টি বোট চঞ্চল ও চপলা, পালকি, ঘাসকাটা যন্ত্র, ব্যবহৃত তলোয়ার, পানিশোধন যন্ত্র, বিভিন্ন সময়ে কবিকে ঘিরে তোলা আলোকচিত্র, কবিগুরুর নিজ হাতে আঁকা ছবি ইত্যাদি।
কুঠিবাড়ির চারপাশে রয়েছে আম, কাঠাঁলসহ চিরসবুজ গাছ ও ফুলের বাগান। কবি যে পুকুরপাড়ে বসে কবিতা লিখতেন, সেখানে আছে সেই সময়ের লাগানো বকুলগাছ। মনোরম পরিবেশের এই কুঠিবাড়ি চত্বরে যে-কারও সারা দিন থাকতে ইচ্ছে করবে। যেখানে বসে তিনি অজস্র কবিতা ও গান লিখেছেন। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে আর পুকুরপাড়ে বসে বিশ্বকবি তার নোবেলজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলি’র অধিকাংশ কবিতা লিখেছেন।
লেখক: কৃষিবিদ ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি


