ঢাকাশনিবার , ৩ জুন ২০২৩
  1. কৃষি ও পরিবেশ
  2. খেলা
  3. জাতীয়
  4. ধর্ম
  5. বিনোদন
  6. বিশ্ব
  7. ভ্রমণ
  8. মতামত
  9. রাজনীতি
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সাক্ষাৎকার
  12. সারাদেশ
  13. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ খবর

ওয়াসিম আকরাম: সুলতান অব সুইং

ক্রীড়া ডেস্ক
জুন ৩, ২০২৩ ১০:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

লেংথ, গতি ও সুইং। এই তিনের সমন্বয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে সেরাদের সেরা বোলার হয়ে উঠেছিলেন। বাঁহাতি বোলার হলেও উইকেটের দুই পাশেই সুইং করাতে পারতেন। ফলে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়াটা স্বভাবে পরিণত হয়েছিল তার।

দীর্ঘ ২০ বছর বিশ্ব ক্রিকেটে বল হাতে শাসন করে বেড়িয়েছেন এ কিংবদন্তি। ভাবছেন বিশ্বের কোন বোলার এতটা সামর্থ্যবান ছিলেন? পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আগে ১৯৯২ সালের একটি ঘটনা জেনে নেয়া যাক…

১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রস্তুত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চ। বাউন্ডারি লাইনের কয়েক মিটার পর থেকে স্টেডিয়ামের গ্যালারি কানায় কানায় পরিপূর্ণ। যেখানে মুখোমুখি পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড।

টুর্নামেন্টের শুরুতে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানের জন্য ফাইনালে পৌঁছে যাওয়াটা বেশ নাটকীয়ই ছিল। কেননা গ্রুপ পর্বের প্রথম পাঁচ ম্যাচের একটিতে জয়, বাকি তিন ম্যাচে পরাজয়। আর একটিতে ড্র। কোনো রকমে ৯ পয়েন্ট নিয়ে সেমি নিশ্চিত করেছিল ইমরান খানের দল। এরপর নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে মেলবোর্নে ফাইনালের টিকিটি কাটেন দ্য গ্রিন ম্যানরা।

শিরোপার লড়াইয়ে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইমরান খান। এ ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন আমির সোহেল ও রমিজ রাজা। তবে শুরুতেই সমর্থকদের হতাশ করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান এ দুই ব্যাটার। এরপর ক্রিজে এসে দলের হাল ধরেন ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াদাঁদ। এই জুটি থেকে ১৩৯ রান আসে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বল খরচ করে ফেলেন তারা।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে আউট হয়ে যান জাভেদ ও ইমরান। পাকিস্তানের কপালে যখন চিন্তার ভাজ তখন বাইশ গজে হাজির ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ, যিনি এর আগে বোলার হিসেবেই বেশ খ্যাতি পেয়েছিলেন। পাকিস্তানের ইনিংসের শেষ দিকে ১৮ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। এতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডকে ২৫০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ইমরান খানের দল।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ইয়ান বোথামকে হারায় ইংল্যান্ড। ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন পাকিস্তানের সেই তরুণই। এরপর ব্যাট হাতে ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছিলেন অ্যালেন ল্যাম্ব। ৪১ বলে ৩১ করা ল্যাম্বকে সুইং জাদুতে সাজঘরে ফেরান সেই পেসার। পরের বলেই ক্রিস লুইসকে শূন্য রানে আউট করেন তিনি।

ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টে মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে আর ম্যাচেই ফিরতে পারেনি ইংলিশ বাহিনী। ফলে ২২ রানের জয়ে শিরোপা ঘরে তোলে পাকিস্তান। এদিন ব্যাট হাতে ৩৩ রান ও বোলিংয়ে তিন উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন চমক দেখানো ২৫ বছর বয়সী পাকিস্তানি যুবক।

বলছিলাম পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামের কথা। যার সুইং জাদুতে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল পাকিস্তান। আজ সেই ওয়াসিমের জীবনের গল্পই শুনব আমরা।

‘আমার কাছে ওয়াসিম আকরাম হচ্ছেন সর্বকালের সেরা বোলারদের একজন। একজন বাঁহাতি, যিনি কিনা দুই দিকেই সুইং করাতে পারতেন। নতুন এবং পুরনো বল দুটো দিয়েই তিনি বিপদজনক ছিলেন’। -গ্লেন ম্যাকগ্রা

১৯৬৬ সালের আজকের এই দিনে (৩ জুন) পাকিস্তানের লাহোরে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ওয়াসিম আকরাম চৌধুরি। বিশ্ব ক্রিকেটে কিংবদন্তি তকমা পেলেও শুরুতে এই খেলার প্রতি কোনো আগ্রহই ছিল না। তিনি ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন টেবিল টেনিসে। তবে বেশ নাটকীয়ভাবেই ক্রিকেটে আবির্ভাব ঘটে তার।

বাবা ছিলেন লাহোরের খুচরা যন্ত্রপাতির বিক্রেতা। মা ছিলেন গৃহিনী। এজন্য ছেলে ওয়াসিমকে তারা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াতে চেয়েছিলেন। যেই ভাবনা সেই কাজ। নির্দিষ্ট বয়সে শহরের সবচেয়ে নামি স্কুলে ভর্তি করানো হয় তাকে। তবে ১২ বছর বয়সেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। কেননা তখন তার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর মায়ের সঙ্গে নানা বাড়িতে চলে আসেন তিনি।

নানা বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়া আসা শুরু হয় ওয়াসিমের। শারীরিকভাবে ফিট হওয়ায় সব ধরনের খেলাই খেলতেন তিনি। অবশ্য ক্লাস নাইন থেকে ক্রিকেটের প্রতি মনোনিবেশ করেন এ ক্রিকেটার।

ক্রিকেট বলে ওয়াসিমের যাত্রা শুরু হয় খালিদ মাহমুদের হাত ধরে। তার কারণেই লুধিয়ানা জিমখানা ক্লাবে নিয়মিত হন তিনি। এরপর সেখানে স্থানীয় কোচ সৌদ খান ও সিদ্দিক খানের সান্নিধ্যে আসেন।

“ঠিক দুপুর দেড়টায় আমি মাঠে থাকতাম, নেটে বল করতাম। অন্য তরুণ ক্রিকেটারদের সাথে মাটিতে পানি দেয়া, অনুশীলন করতাম। সেখানে প্রায় একশোর বেশি তরুণ ক্রিকেটার ছিলেন, অনেকগুলো ক্লাব এই একই মাঠে অনুশীলন করতো। এই সময়ে আমার কোচরা আমার খেয়াল রাখেন। তারা আমাকে নিজ খরচে একটা নতুন বল কিনে দেন এবং সেটা আমাকে একেবারেই দিয়ে দেন খেলার জন্য।” -ওয়াসিম আকরাম

পড়ার টেবিলের চেয়ে বাইশ গজে অনেক বেশি মনোযোগ দেন ওয়াসিম। ফলে মাধ্যমিকে খারাপ ফলাফল করেন। যদিও ভর্তির সময় ইসলামিয়া কলেজ ও গভর্নমেন্ট কলেজের ক্রিকেট ট্রায়ালে টিকে যান। পরে লুধিয়ানা কোচ সিদ্দিকের পরামর্শে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন তিনি।

অবশ্য কলেজ টিমে প্রথম বর্ষে মাঠেই নামার সুযোগ হয়নি ওয়াসিমের। মূলত ওই দলের অধিনায়ক ছিলেন বাঁহাতি পেসার। ফলে বেশিরভাগ সময় বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছে তাকে। এরপর কলেজ টিমের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়নি তাকে। কেননা দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পরপরই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান তিনি।

ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় লুধিয়ানা ও লাহোরের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচে। সেদিন একাই চার উইকেট শিকার করেন ওয়াসিম। যার মধ্যে রমিজ রাজা ও ইন্তেখাব আলমের উইকেটও ছিল। আর এতেই জাতীয় দলের প্রাথমিক দরজা খুলে যায় তার জন্য।

১৯৮৪ সালে দেশটির সাবেক পেসার খান মোহাম্মদের ক্যাম্পে ডাক পান ওয়াসিম আকরাম। সেখানে ১০০ জন ক্রিকেটারের নেতৃত্ব ভার কাঁধে ওঠে আগা সাদাতের।

এরপর ওয়াসিমকে নিয়ে গণমাধ্যমে লুধিয়ানার কোচ সৌদ খান বলেন, “একদিন ওয়াসিম এসে বলেন আমি ক্যাম্পে নতুন বল পাই না। আমি আগা সাদাতকে বলি, ছেলেটাকে নতুন বলে বল করতে দেন। ওয়াসিম এই অপেক্ষায়ই ছিল, কোন ব্যাটসম্যানের জন্যই নতুন বলে ওয়াসিম আকরামকে খেলা সহজ কথা না।”

১৯৮৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হয় ওয়াসিমের। অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে সাদা পোশাকে অভিষেক হয় তার। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে শূন্য রানে আউট হলেও বোলিংয়ে দুই উইকেট তুলে নেন তিনি।

প্রথম টেস্টে নিষ্প্রভ থাকলেও পরের ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে একাই দশ উইকেট শিকার করেন লাহোরের তরুণ তুর্কি। যদিও ওই ম্যাচটাও হারতে হয়েছিল তাকে।

একই বছরের নভেম্বরে ফিরতি সফরে পাকিস্তানে আসে নিউজিল্যান্ড। এ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষিক্ত হন ওয়াসিম। ওই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পেলেও বল হাতে নিয়েছিলেন। চার ওভার বল করে উইকেট শূন্য রয়ে যান তিনি।

ওয়াসিমের ১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া ক্রিকেটীয় যাত্রার সমাপ্তি হয় ২০০৩ সালে। দীর্ঘ ২০ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ওয়ানডেতে ৫০২টি এবং টেস্টে ক্রিকেটে ৪১৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এছাড়াও ব্যাটিংয়ে দুই ফরম্যাট মিলিয়ে ৬ হাজার ৬১৫ রান করেন এ অলরাউন্ডার।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইতি টেনেই চুপ থাকেননি ওয়াসিম আকরাম। বাইশ গজকে বিদায় বলে কোচিং ক্যারিয়ারে মনোযোগ দেন তিনি। ২০১০ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে বোলিং কোচের দায়িত্ব সামলাছেন। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেও কোচিং করিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার হিসেবেই বিশেষ খ্যাতি রয়েছে এ কিংবদন্তির।

ক্যারিয়ারের শুরুটা রাঙাতে না পারলেও সময়ের ব্যবধানে পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম মায়েস্ত্রো হয়ে ওঠেন ওয়াসিম আকরাম চৌধুরি। গতি, লেংথ আর সুইংয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে বনে যান ‘সুলতান অব সুইং।’

www.sangbadlive24.com এ প্রকাশিত সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও সবকিছুই আমাদের নিজস্ব। বিনা অনুমতিতে এই নিউজ পোর্টালের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। যে কোন বিষয়ে নিউজ/ফিচার/ছবি/ভিডিও পাঠান news.sangbadlive24@gmail.com এই ইমেইলে।