ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৯ জুন ২০২৩
  1. কৃষি ও পরিবেশ
  2. খেলা
  3. জাতীয়
  4. ধর্ম
  5. বিনোদন
  6. বিশ্ব
  7. ভ্রমণ
  8. মতামত
  9. রাজনীতি
  10. শিক্ষাঙ্গন
  11. সাক্ষাৎকার
  12. সারাদেশ
  13. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ খবর

একটি বন্ধুত্বের গল্প

মতামত বিভাগ
জুন ২৯, ২০২৩ ৬:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রদীপ বিশ্বাস, ভারত: তারিখটা ২২শে নভেম্বর,২০২২। ওড়িশার ঈশনেশ্বর মন্দির থেকে যাত্রা শুরু করে প্রবেশ করলাম অন্ধ্রপ্রদেশ। ৬০কিমি পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্য ঠিক করলাম অন্ধ্রপ্রদেশের মান্দাসা নামক একটি স্বল্প বিখ্যাত হাজার বছরের পুরোনো বাসুদেব মন্দির। এর আগে ওড়িশায় এক পৌড়ের প্রচ্ছন্ন হুমকি পেয়েছিলাম “ওড়িশা তো ঠিক আছে, বাংলার পাশের রাজ্য, লোকজনও ভাল, হিন্দি বলে কাজ চালানো যায়, অন্ধ্রপ্রদেশ গেলে কেমন করে চলবে। কি করে কথা বলবে, ওরা তো হিন্দি জানেও না, জানলেও বলতে চায় না,, তখন কি করবে?”..

এসব কথা শোনার পর মনে মনে আমরা শুধু এটাই ভেবেছিলাম অন্ধপ্রদেশ তো ভারতবর্ষের বাইরে নয়, যা হবে দেখা যাবে।
যেকোন রাজ্যে প্রথমদিন একটু আগেভাগে আশ্রয়ের খোঁজ করি। সে রাজ্যে হপ্তাখানেক কাটানোর পর বোঝা যায় কতটা কি সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে।

তো সেই মত মান্দাসায় ২.৩০ নাগাদ পৌছে বাসুদেব মন্দিরের একদম পাশে পাহাড়ি সৌন্দর্য কিছুক্ষন উপভোগ করে আশ্রয়ের খোজ শুরু করলাম। এবং অনুভব করলাম ওড়িশার কাকা খুব একটা ভুল বলেনি। এমন সময় দোগলা পাতলা দুটি ছেলে এল পুকুর পাড়ের হাওয়া খেতে। যাদের একজনের নাম কিরন। পরিচয় হল। এবং কিরন ভাই সউৎসাহে আমাদের জন্য বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ের খোঁজ করতে থাকল। অবশেষে কিছু ব্যবস্থা না হওয়ায় ফোন করল তার জিগলি দোস্ত এক সিনেমা হলের মালিককে। যিনি সেই সময় শারীরিক অসুস্থতার কারনে হসপিটালে ভর্তি। দুই বন্ধুতে কথা বলে নিজ খরচে কাছের একটি হোটেলে রাত্রিবাসের জন্য রুম বুক করে দিল। আমরা আশ্রয় পেয়ে প্রসন্ন হলাম ঠিকই কিন্তু মনের মধ্যে খিচ থেকে গেলে। যারা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করল তাদের একজনকে চাক্ষুস দেখতেই পেলাম না কারন সে হসপিটালে শয্যাসায়ী আর অপরজন কিরন ভাই যে আমাদের সাথে আছে সে হয়ত বা স্কুল স্টুডেন্ট বা কলেজ স্টুডেন্ট হবে। নিজ সামান্য উপার্জন থেকে হয়ত আমাদের ব্যয় বহন করল। ভ্রম ভাঙল তখন যখন কিরন ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি কর। কিরন ভাই বলল “আমি সোলজার” বিগত দুই বছর হল আর্মিতে যোগদান করেছি এবং এখন ছুটিতে ঘরে এসেছি।” কিরন ভাই জেলার সেরা ক্রীড়াবীদ ছিল।কিরন ভাইয়ের পোষ্টিং থাকে অরুনাচলের সেই দুরুহ জায়গায় যেখানে সারাবছর বরফের চাদরে ঢাকা থাকে। দিনে কয়েক ঘণ্টা ক্যাম্পে নেমে এলে মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়,যেখানে চিনা সৈনরা মাঝে মধ্যেই অতর্কিত আক্রমণ করে, যেখানে জলকে গরম পাত্র থেকে মাটিতে ঢাললে মাটিতে পরার আগে বরফ হয়ে যায়।

সেইদিন কিরন ভাই মান্দাসার বিখ্যাত ‘মালকোভা’ নামক ক্ষীরও খাইয়েছিল। সেই শুরু তারপর থেকে আমাদের সৈনিক বন্ধুটির সাথে মাঝে মধ্যেই কথা হত, চ্যাট হত।

কাট টু আজ ২৯শে জুন,২০২৩

গতকাল স্টেটাস দেখে কিরনভাই ফোন করল কেমন আছি, কোথায় আছি?
জানালাম গুয়াহাটি আছি। ভাই বলল আমিও আছি গুয়াহাটি ২৪০ আর্মি ক্যাম্পে। মাত্র হপ্তাখানেকের জন্য এখানে পোস্টিং পরেছে।কথা হল আগামী কাল‌ ১০- ১২ টার মধ্যে এলে দেখা হবে। আমরা তো হোটেল থেকে বেরিয়ে ১৫ মিনিটে পৌছে গেলাম। কিন্তু কিরন ভাইয়ের ডিউটি টাইম ছিল সকাল ৬টা থেকে বেলা ১টা। ভাই আমাদের সাথে দেখা করার জন্য বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভোর ৫টায় ডিউটি জয়েন করেছে যাতে মাঝের একঘন্টা ফাকা পাওয়া যায়… কিছু বিশেষ কারনে আর্মি ক্যাম্প থেকে কোন জোওয়ানকেই বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বেশি সময়ের জন্য। তার মধ্যে থেকেও কিরন ভাই এসে আমাদের সাথে দেখা করল। আগামীকাল আবার কিরন ভাই রওনা দেবে অরুনাচলে। আমরা সত্যিই ভীষণ অহংকারী এবং সৌভাগ্যবান এমন একজন সৈনিক বন্ধুর জন্য। জয়হিন্দ।

www.sangbadlive24.com এ প্রকাশিত সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও সবকিছুই আমাদের নিজস্ব। বিনা অনুমতিতে এই নিউজ পোর্টালের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। যে কোন বিষয়ে নিউজ/ফিচার/ছবি/ভিডিও পাঠান news.sangbadlive24@gmail.com এই ইমেইলে।